সাড়া নেই হজের নিবন্ধনে খালি ৮২ শতাংশ কোটা
হজ নিবন্ধন বাকি চার দিন
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
হজের নিবন্ধনে সাড়া নেই, খালি ৮২ শতাংশ কোটা আগামী বছর হজে অর্ধেক কোটাও পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর পল্টনের হজ এজেন্সি দেশ ভ্রমণ প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবার ১১০ জন হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু গত সোমবার পর্যন্ত একজনও প্রাথমিক নিবন্ধন করেননি। নিবন্ধনের সময় প্রায় শেষ হয়ে এলেও এমন শতাধিক এজেন্সি থেকে একজনও নিবন্ধন করেননি বলে জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চলতি বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। শুরুর পর দু-একজন করে নিবন্ধন করছিলেন। তখন এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, হজের খরচ কত হচ্ছে সেটা না জানলে মানুষ নিবন্ধন করবে না, প্যাকেজ ঘোষণা হলে নিবন্ধনের হার বাড়বে। আগামী বছর হজের খরচ একলাখ টাকা কমছে। কিন্তু প্যাকেজ ঘোষণার একমাস হলেও নিবন্ধনে সাড়া মেলেনি। আর পাঁচদিন বাকি থাকলেও কোটার মাত্র ১৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
জানা যায়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৫ সাল) বাংলাদেশ থেকে একলাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি একলাখ ১৭ হাজার হজযাত্রী যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত ২২ হাজার ৫০০ জনের মতো হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন, যা কোটার প্রায় ১৮ শতাংশ। এখনো ৮২ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করেননি।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে একলাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জন হজে যাননি অর্থাৎ কোটার প্রায় ৩৩ শতাংশ খালি ছিল। আগামী বছর কোটার প্রায় অর্ধেক খালি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে একটি শ্রেণি হাতে টাকা থাকলেও চাপে আছে। তাদের এবার হজে যাওয়ার নিয়ত থাকলেও কিন্তু তারা পারছেন না বলে আমাদের ধারণা। এ শ্রেণির মধ্যে এবার হজে যাওয়ার প্রবণতা কম।- ফরিদ আহমেদ মজুমদার
গত ৩০ অক্টোবর সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পরে হজ এজেন্সির দুই গ্রুপ ৬ ও ৭ নভেম্বর প্যাকেজ ঘোষণা করে। ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী খরচ গত বছরের চেয়ে কমেছে। হজ এজেন্সির মালিক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা বেশি হয়ে গেছে। হজের এখনো ছয় মাস বাকি, এত আগে অনেকেরই টাকা গোছানো নেই। কিন্তু গত বছর থেকে হজের প্রস্তুতির কার্যক্রম আগেই করতে হচ্ছে। তাই অনেকেই না বোঝার কারণে ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না।
এ ছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বড় একটা শ্রেণি হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও মনে করছেন তারা। কারো কারো হজে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না, তারা প্রাক-নিবন্ধন করেই থেমে গেছেন। কারো আবার টাকা জমা থাকলেও ব্যাংকগুলো রুগণ অবস্থায় চলে যাওয়ায় টাকা তুলতে পারছেন না।
এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য কয়েক দফা তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ সময়ের পর প্রাথমিক নিবন্ধনের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিন লাখ টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু লোকজন বলছেন আমাদের কাছে একসঙ্গে এখন এত টাকা নেই। হজের বাকি এখনো ছয় মাস, একজন গ্রামের হজযাত্রীর একসঙ্গে এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। শহরের কিছু লোকের পক্ষে এটা সম্ভব। একটি হজ এজেন্সির এমডি মো. আবু তাহের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক নিবন্ধনের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। তবে শেষ সময়ে নিবন্ধনের হার বেড়ে যায়। তাই পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। এজেন্সি মালিকরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছেন। তারাও আলাদা করে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকরা’-এর সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী বলেন, নতুন করে কোনো কৌশল অবলম্বন করা না হলে এবার হজযাত্রী ৫০ হাজারের বেশি হবে না বলে আমরা মনে করছি। মানুষ মনে করেই নিয়েছে যে হজ অসাধ্য বিষয়, সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। তবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। মানুষ এখন ওমরা করে চলে আসে। ওমরা করলে যে তার ফরজ আদায় হচ্ছে না, সেটা প্রচার-প্রচারণার বিষয় আছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম যে দুই লাখ টাকা নিয়ে যাতে প্রাথমিক নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়। এটা করলেও নিবন্ধনে কিছুটা গতি আসতো।
মেসার্স এস আর ট্রেড ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকার ভাড়া কমিয়েছে, আমরা সাধুবাদ জানাই। আরো কমানো সম্ভব। হজ চুক্তির সময় সৌদি অংশের খরচ কমানোর চেষ্টা করতে পারে সরকার। হজ চুক্তির পর প্যাকেজটা রিভাইস করা যেতে পারে। টাকা কিছুটা কমলে মানুষের সুবিধা হবে। প্রাক-নিবন্ধিত সবাই যদি নিবন্ধন করে তারপরও কোটা পূরণ হবে না। এবার আগ্রহটাই মানুষের কম। মানুষ কেন নিবন্ধন করছে না- সে বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, প্যাকেজ মূল্য বেশি সেটা তো আছে। এর ওপর এবছর হয়ে গেলো বন্যা, হলো রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। সবকিছু মিলিয়ে হজে প্রভাবে পড়ছে।
১১০ জন প্রাক-নিবন্ধন করলেও কোনো নিবন্ধন না করা দেশ ভ্রমণ প্রাইভেট লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের বলেন, ‘তিন লাখ টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু লোকজন বলছেন আমাদের কাছে একসঙ্গে এখন এত টাকা নেই। হজের বাকি এখনো ছয় মাস, একজন গ্রামের হজযাত্রীর একসঙ্গে এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। শহরের কিছু লোকের পক্ষে এটা সম্ভব।’
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, হজ হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এটি পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। প্রাথমিক নিবন্ধনের জমা নেয়া টাকা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে যে টাকা নেয়া হচ্ছে, সেটা শুধু বাংলাদেশ প্রান্তের খরচের জন্য নেয়া হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের জন্য সৌদি আরবে খরচের একটা অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। ওই টাকাটা সময়মতো পাঠাতে না পারলে ওখানকার কাজগুলো পিছিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গত বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটা তহবিল ছিল, সেখান থেকে সেই টাকাটা পরিশোধ করে পরে সমন্বয় করা হয়েছিল। এবার সেই তহবিলটা নেই। তাই মিনিমাম এ টাকাটা প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে। গত বছর টাকা কম নেয়ায় সমস্যা হয়েছিল বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন। সচিব আরো বলেন, যারা হজ করতে যাবেন, তারা হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেন না। তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে। অর্থের সংস্থানটা কোথায় থেকে হবে সেটাও ঠিক করা থাকে। নিবন্ধনের সবশেষ অবস্থা দেখে, উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিবন্ধনের সময় বাড়াবো কী না সেই সিদ্ধান্ত নেবো। পরিস্থিতির আলোকেই পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে।
আফতাব হোসেন আরো বলেন, আমরা বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আবার কথা বলবো। অনেকে বিমান ভাড়া রিভিউ করার জন্য বলেছেন। হাজিদের একটু রিলিফ দিতে পারলে আমাদের ভালো লাগবে। তবে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন এবছর আর হবে না।