সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার পর সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে আপাতত সন্তুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা সবাই এদেশের মানুষ। সবাই একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। মুসলিমণ্ডহিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্ট্রান সবাই সম্প্রীতির সঙ্গে থাকতে চাই। তবে আমাদের এখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। মামলাও করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে আদালত বলেন, আপাতত আমরা এমন ব্যবস্থা নেওয়ায় সন্তুষ্ট।
চট্টগ্রামের আইনজীবী হত্যার ঘটনার সরকারের পদক্ষেপের অগ্রগতি তুলে ধরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, এই ঘটানটিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে। একটিতে ১৩ জন, একটিতে ১৪ জন, অপর একটিতে ৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সদস্যদের হাতে আইনজীবী আলিফের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ইসকনকে নিষিদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন এক আইনজীবী। হাইকোর্টে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের মতামত জানতে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালতে ডেকে পাঠানো হয়।
ওই সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতে এসে বলেন, সারাদেশের মানুষের মতো তারও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তবে তিনি অনুরোধ করেন, এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত যেন আদালত না নেয়। কারণ সরকার এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে এবং এটি সরকারের এখন ১ নম্বর এজেন্ডা। আদালত তখন প্রশ্ন করেন, চট্টগ্রাম ও রংপুরে এসব ঘটনা কী শুরু হয়েছে?’ এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পরে হাইকোর্ট আদালতের পরবর্তী নির্দেশে বলেন, বিকেলের মধ্যে আমাদের বিস্তারিত জানাতে হবে।’ তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাকে একদিন সময় দিন, আগামীকাল এ বিষয়ে জানাব, আজকের মধ্যে সম্ভব হবে না। আদালত তার পরবর্তী আদেশে বলেন, ঠিক আছে, কালকের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই অবনতি না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে তাকে কারাগারে নেয়ার পথে ইসকন সদস্য ও চিন্ময়ের অনুসারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে, তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা আদালত চত্বরে অবস্থিত মসজিদে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন।