খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও লবঙ্গ উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ২টি লবঙ্গ খেলে শরীর অনেক ভালো থাকে। ঠাণ্ডা, গলাব্যথা থেকে শুরু করে দাঁতের ব্যথাসহ অনেক সমস্যাই কমিয়ে দিতে পারে লবঙ্গ। এ ছাড়া এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। কারণ এর বেশ কিছু উপাদান বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণ আটকাতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে শীত এলো বলে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে রাতের দিকে তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমবে। বাতাসে দূষণ এবং ভাইরাসের পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে যাদের অ্যালার্জি বা ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কষ্ট আরো সাংঘাতিক আকার ধারণ করেছে। সুস্থ থাকতে গেলে এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। এই কাজে সাহায্য করতে পারে লবঙ্গ। চলুন জেনে নেয়া যাক বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়মগুলো।
শ্বসনতন্ত্রের জন্য উপকারী : সর্দি-কাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটির জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কাশি, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গগুলো উপশম করতে সাহায্য করে। লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে সর্দি, কফ, ঠাণ্ডা লাগা, অ্যাজমার সমস্যায় সুফল পাওয়া যায়।
হজমশক্তি বাড়ায় : সকালে খালি পেটে লবঙ্গ ভেজানো পানি পান করলে পরিপাক ভাল হয়। পাশাপাশি গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপার মতো সমস্যারও নিরাময় হয়। খাবার হজমে সহায়ক উৎসেচকগুলি ক্ষরণে সহায়তা করে।
গলা-বুক জ্বালা কমায়: লবঙ্গের নিজস্ব ঝাঁজ রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেও এই মশলাটি গরম। কিন্তু গলা-বুক জ্বালার মতো সমস্যা নিরাময় করতে লবঙ্গ ভেজানো পানির জুড়ি নেই। শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতেও এই পানীয়টি বেশ কাজের।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে : সকালে হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। অনেকে আবার শসা, আদা, পুদিনা পাতা মেশানো ডিটক্স পানীয়ও খেয়ে থাকেন। তবে এর বদলে যদি লবঙ্গ ভেজানো পানি খাওয়া যায়, তাহলে বিপাকহারের ‘পালে হাওয়া লাগে’। যা পরোক্ষভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করে: সাধারণ সর্দিকাশি, গলা খুসখুসে আরাম দেয় লবঙ্গ। এই মশলায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো আসলে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল। মৌসুম বদলের সময়ে এই টোটকা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো জোরদার করে তুলতে সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি রক্তচাপ কমাতে, রক্তনালির কার্যকারিতা ভালো রাখতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো দূর করে রক্তকে পরিশোধন করতে সাহায্য করে।
দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় : মাড়ির ক্ষয় বা দাঁতের ব্যথা রোধে লবঙ্গ সাহায্য করে। মাড়ির সমস্যা জিনজিভাইটিস ও পেরিওডনটাইটিস হলে এটি ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। প্রায় সব টুথপেস্টের সাধারণ উপকরণ এই লবঙ্গ। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গ তুলনাহীন। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় ২টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবিয়ে ঘুমাতে হবে। কয়েকটি মুখে রেখে চিবালেই আপনার নিঃশ্বাস হয়ে উঠবে তরতাজা।
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে : লবঙ্গে রয়েছে ইউজেনল, যার শক্তিশালী প্রদাহরোধী গুণ আছে। নিয়মিত লবঙ্গ খেলে আর্থ্রাইটিসের মতো প্রদাহজনিত রোগে আরাম পাওয়া সম্ভব। জয়েন্টপেইন কমানোর পাশাপাশি পেশির ব্যথা, হাঁটুতে, পিঠে বা হাড়ের ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।