বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে একটি সংগঠন, যাদের বৈধতা আছে কি আছে না এ সম্পর্কেও বাংলাদেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতা যার বিতর্কিত আচার আচরণের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের ভেতরের কেউ কেউ এবং বাইরে থেকে সেই বিতর্কিত নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছেন। এই প্রতিবাদ আসাটাই সারাদেশের মানুষকে একধরনের দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলেছে এবং মানুষ বিস্মিত হয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করছে। চিন্ময় নামে একটি ব্যক্তি যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অথচ সেই সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন তাকে পূর্বেই অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে দাঁড়াক তা কখনই পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র চায়নি। চায়নি বলেই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তাদের অশ্বমেধ যজ্ঞ করার কিছু মানুষকে এদেশে পাঠিয়ে দিয়ে চক্রান্ত করছেন। তাদের জন্য তারা বিলাপ করছেন। তারা আটক হলে আক্ষেপ করছেন, প্রতিবাদ করছে। চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি ভারতের উলম্ব অভিযান। গতকাল শুক্রবার বিকালে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর-ঘাতক সরকারের পতনের পর থেকে এদের (ইসকন) অস্বাভাবিক তৎপরতা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। তাদের কি দাবি? দাবি সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি সেটিও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। তাদের দাবি নিয়ে দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে কি এমন ঘটনা ঘটেছে, যে ৭টি বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি দিয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম নামে একটি ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? কি করতে চাচ্ছে? আবার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তার গ্রেপ্তার নিয়ে মুক্তি দাবি করেছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তো লুট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি গুম-খুনসহ ভয়ঙ্কর অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। চিন্ময় যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু দেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্যদেশের স্টেটমেন্ট বিরল। বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্রলীগের খুনিরা যখন বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করলো, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলো, নিপুন রায় রাস্তার মাঝে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিলে তখন তো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবাদ করতে দেখলাম না! তারাও তো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বাংলাদেশে ইসকন নামে ভূঁইফোড় সংগঠনটিকে কখনও দেখিনি, শেখ হাসিনা যখন দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে হত্যা করলো তাদের একটি স্টেটমেন্ট দিতে! অথচ, যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক, যা সারাদেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছেন। অথচ তাদের একজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে, যারা দুইদিন আগেই একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে, সেই সংগঠনের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্যদেশ বিবৃতি দিচ্ছেন তার মুক্তির জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি আছে? এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয়, তারা বিশেষ কোনো মহলকে মদদ দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশে যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, সে পরিবর্তনকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তির জন্য তারা মুক্তি দাবি করছেন, সে যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তিটি দেশের স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। কক্সবাজারের এক ওসি একজন মেজরকে গুলি করে হত্যা করেছিল। সে ওসি হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল। সে সময়ও আমরা দেখেছি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র তার পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। তাহলে এখানে কি ভারত মানুষকে জাগ যজ্ঞ করে ছেড়েছেন। যারা ঢুকে পড়বে, হেটে যাবে কিছু বলা যাবে না। অন্যায় করলেও কিছু করা যাবে না। এগুলো আজকে মানুষের মনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই জাতির সার্বভৌমত্ব, বিশেষ করে ৫২ থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে অর্জনগুলো সে অর্জনকে অবমাননা করা হচ্ছে। এটি কখনও এদেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। তাদের আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের ভিতরে একটি ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের ব্যানারে কি হচ্ছে? কারা করাচ্ছে? রিজভী বলেন, আমরা বারবার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কিছু বিষয় নিয়ে যে সমালোচনা করতাম, তাদের অন্যায়ের যে প্রতিবাদ করতাম এটি যে ন্যায়সঙ্গত এ ঘটনার মাধ্যমে তা আবারও প্রমানিত হলো।
বিএনপি সবসময় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করেছে। শুধু আমাদের দেশের পরিবেশবিদরাই নয়, ভারতের পরিবেশেবিদরাও বলেছে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন দেখলে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখনই এই প্রকল্পের অনুমতি দিয়ে দিল। ২০১৬ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করে ২০২২ তা উপযোগী হয়ে যায়। আমাদের যে আশঙ্কা ছিল তা আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নদীর মাছ মরে যাচ্ছে, গাছগাছালি বিনষ্ট হচ্ছে। শুধুমাত্র পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তাদের ব্যবসায়ীদের খুশি করার জন্য শেখ হাসিনা কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ, বাংলাদেশের পরিবেশ, বৃক্ষ, পানি, পাখি সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হাসিনার ছিলো না, বরং এগুলোকে ধ্বংস করে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ, তাকে ক্ষমতায় রেখে দিবে এই গ্যারান্টি নিশ্চিত করার জন্যই সেদিন হাসিনা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমতি দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের স্বার্থে কখনই কাজ করেনি। বাংলাদেশ মরে যাক, ধ্বংস হোক এতে তাদের কিছু আসে যায় না, এটি হচ্ছে দিল্লির ঘোষিত নীতি। শেখ হাসিনা থাকলে তাদের অনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করতে কোনো বিঘ্ন হতো না। এদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ, জাতীয়তাবাদী শক্তি তারা যেহেতু কিছুটা স্পেস পেয়েছে, গণতন্ত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে, বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে, এই জিনিসগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ভালো লাগছে না।