সুসংবাদ প্রতিদিন
কুমড়া বড়িতে ফিরছে সচ্ছলতা
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নওগাঁ প্রতিনিধি
শীত এলেই বেড়ে যায় কুমড়া বড়ির চাহিদা। নওগাঁয় কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন নারীরা। শহরের সুলতানপুর মহল্লার শাহ পাড়া এখন কুমড়া বড়ির পাড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় পাশের জেলায়। মৌসুমে এ পাড়া থেকে প্রায় কোটি টাকার কুমড়া বড়ি উৎপাদন হয়। দুই যুগের অধিক সময় ধরে শীত মৌসুমে গৃহবধূরা তৈরি করছে কুমড়া বড়ি। তাদের এ উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এক খাবারের নাম কুমড়া বড়ি। শীত এলেই কুমড়া বড়ি বানানো ধুম পড়ে যায়। অনেকে একে ডালের বড়িও বলে থাকেন। তরকারির স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় কুমড়া বড়ি। মজাদার বড়ি তরকারির পাশাপাশি ভর্তা করেও খাওয়া হয়। মাশকালাই, কুমড়া ও কয়েক রকমের মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়া বড়ি। নওগাঁ শহরের সুলতানপুর মহল্লার শাহ পাড়া ৫০-৬০টি পরিবার প্রায় দুই যুগের অধিক সময় ধরে কুমড়া বড়ি তৈরি করে আসছেন। এই পাড়াটি এখন কুমড়া বড়ির পাড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় পাশের জেলায়। কুমড়া বড়ি তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন গৃহবধুরা। খোসা ছাড়ানো, তৈরি ও শুকনো সবই তারা করেন। শুধু বাড়ির পুরুষরা বাজার থেকে মাসকালাই কেনা ও কুমড়া বড়ি বিক্রি করে থাকেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর মাসকালাইয়ের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। তবে কুমড়া বড়ি বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে গত বছরের দাম ২৮০-৩০০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও লাভের পরিমাণ কমেছে বলে জানান কারিগররা।
বছরে সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (৬ মাস) কুমড়া বড়ি তৈরি হয়। কারিগর শিখা রানী বলেন- বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশি। স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় হয়। যা দিয়ে সংসারে বাড়তি চাহিদা পুরণ করছে। কালাই থেকে খোসা ছাড়িয়ে রাতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর বস্তায় ডলতে হয়। এরপর পানি দিয়ে পরিস্কার করে মেশিনে পিষতে হয়। পরে ফ্যানা তুলে পাতালা ও ফাঁপা করে বড়ি তৈরি করা হয়। চাটাইয়ে শুকাতে ৩ দিন সময় লাগে। তবে তবে আবহাওয়া একটু খারাপ থাকলে ৪-৫ দিন লেগে যায়।
কারিগর বেলি রানি বলেন- প্রতিদিন ৪-৫ কেজি কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। গত ১৭ বছর থেকে তৈরি করে আসছি। গত বছর ৭ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) কুমড়া বড়ি তৈরি করেছিলাম। বাড়তি আয় সংসারে লাগানো হয়। এ বছর প্রতিকেজি মাসকালাই দাম বেড়ে ১৪৫-১৫০ টাকা কেজি হয়েছে। যা গত বছর মাসকালাইয়ের দাম ছিল ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। আমাদের কালাই কিনতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে গত বছরের দামেই। যদি ৩৫০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করা যেতে তাহলে ভালো লাভ থাকতো। কারিগর সজিব শাহ বলেন- ৫ কেজি মাসকালাইয়ে ৪ কেজি শুকনা কুমড়া বড়ি তৈরি হয়। যার খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ থাকে ২০০-২৫০ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়িরা দাম না বাড়িয়ে আগের দামে কিনছে। পরিশ্রম বেশি হলেও লাভের পরিমাণ কমেছে। নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন- গৃহস্থালির পাশাপাশি কুমড়া বড়ি তৈরি করছে গৃহবধূরা। এতে বাড়তি আয়ে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। তবে কর্মদক্ষতা বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ স্বল্প সুদে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।