ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা আরো ভালো জায়গায় যাক। আমরা চাচ্ছি, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন ন্যায্যতা, সমতা এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়। সেটাই আমাদের ফোকাস* যাতে দুই দেশের মানুষই এর সুবিধটা পায়।’ গতকাল রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ডেপুটি প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, আজ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফরে আসবেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। তার সঙ্গে আমাদের ভাষাগত, ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতিসহ অনেক সম্পর্ক রয়েছে। অনেকগুলো নদী আমরা তাদের সঙ্গে শেয়ার করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো আছে, তার প্রতিটি বিষয়ই আলাপ হবে। এর প্রতিটি বিষয়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ ভারতের সঙ্গে অসমণ্ডচুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ছাত্রসমাজ অসম চুক্তির কথা বলেছেন। আমরাও এটা শুনেছি। ভারতের সঙ্গে সামনে কী ধরনের বিষয় ঘটতে পারে* এটা তো ভবিষ্যৎ বলতে পারে। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ঠিক রেখেই যেগুলো অসম চুক্তি রয়েছে, তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা ভবিষ্যতে হবে।’ শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে মৌখিক কোনো প্রস্তাব ভারত সরকারের কাছে দেয়া হচ্ছে না, সরকার কেন এটা করছে না* জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের সম্মুখীন করতে চাই। তার আমলে যে গণহত্যা হলো, জুলাই-আগস্টে ১৫০০ মানুষের হত্যার নির্দেশদাতা তো তিনি। সরকারপ্রধান থাকাকালে যেসব গুম হয়েছে। শ্বেতপত্রে এসেছে ১৬ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর পাচার হয়েছে। এটা তো বাংলাদেশের জনগণের টাকা। এটা চুরির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে গেছে। এই গোটা বিষয় আইনের আওতায় আনাটা হচ্ছে সরকারের প্রতিশ্রুতি। আমরা এটা করবো। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সেটার ক্ষেত্রে কিছু আইনগত ও অগ্রগতির বিষয় রয়েছে। এটা সম্পন্ন করার পরই আপনি ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বলতে পারেন। আমরা সেই পদ্ধতিটা সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপ্রোস করবো ভারতের কাছে।’ ভারত থেকে যে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে, মেটার সঙ্গে বৈঠকে তা বলা হয়েছে কি না* জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এই অপতথ্যের বিষয়গুলোতে মেটার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এটা কীভাবে ট্যাকেল করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কত জন আসবে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থেকে জানার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবাই এই সরকারকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এই সাক্ষাৎ।’ এ বিষয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এখানে মেটার থার্ড পার্টি আছে, যারা মেটার হয়ে ইনভেস্টিগেট করে। তথ্যের উৎস কী? অনেক সময় সরকারের তরফ থেকে মেটার নজরে আনতে গেলে তারা সংশয়ের চোখে দেখে। আগের সরকার অনেক সময় এরকম করেছে। আমাদের চাওয়া হচ্ছে যে, নিউজগুলো ওনারা রিমুভ করবেন।’ তিনি বলেন, মিসইনফরমেশন যদি এমন পর্যায়েৃ যাতে সেটা আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটা মেটার নজরে আনবো। জনগণের বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা নিউজ ছড়ানো হয়, অবশ্যই নজরে আনবো। দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আসলে অবশ্যই নজরে আনবো। কিন্তু আমরা চাচ্ছি, অথেনটিক ওয়েতে যে সিরিয়াস মিথ্যা তথ্যৃ আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, আমরা তা নজরে আনবো।’ তিনি বলেন, ‘মেটা তো দেখছে বাংলাদেশকে ঘিরে কী ধরনের ম্যাসিভ ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইন হচ্ছে। মেটার হয়ে এখানে অনেকে কাজ করেন। থার্ড পার্টি যারা মেটার হয়ে ফেক নিউজ, ডিজ ও মিস ইনফরমেশন ডিটেক্ট করেন। তারা অবশ্যই মেটাকে সতর্ক করবে। মেটার এখানে ভালো ব্যবসা রয়েছে। অবশ্যই তারা এটা দেখবে। আমরা চাচ্ছি, যেগুলো মিথ্যা ও অসত্য তা যেন রিমুভ করা হয়।’ ভারতকে এখানে এসে সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানানো হচ্ছে, কিন্তু তারা আসছে না* এ বিষয়ে নতুন করে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসসচিব বলেন, ‘আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারি। বলতে পারি, আসেন দেখে গ্রাউন্ড থেকে প্রতিবেদন করেন। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। সেজন্য আমরা আমন্ত্রণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, গ্রাউন্ডে আসলে এই অপতথ্যগুলো ভারতের মিডিয়াতে যা দেখা যাচ্ছে, তা অনেকাংশেই দূরীভূত হবে। এখন তারা পাঠাবে কিনা তাদের নিজস্ব বিষয়। অনেক গণমাধ্যম আছে মিথ্যা কাভারে বিশ্বাসী। মিথ্যা দ্রুত প্রসারিত হয়। সত্য সেভাবে নজর কাড়ে না।’
ভোজ্য তেলের সংকট ও সিন্ডিকেট প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘এ ধরনের একটি বিষয়টি সরকারের নজরেও আসছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে। তারা বিস্তারিত জানাবে। তবে আমরা মনে করছি না, বাজারে সয়াবিন তেলের কোনও সংকট আছে। যথেষ্ট সয়াবিন তেলের মজুত রয়েছে। সামনে রমজানের সময় সরবরাহে যাতে কোনও ঘাটতি না হয়, তার জন্য এবং মানুষ যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে সয়াবিন বা পামঅয়েল কিনতে পারে, সেজন্য সরকার আমদানিকারকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে। এলজি খোলা সহজীকরণ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের স্বর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে* রোজার সময়ে যাতে বাংলাদেশি মানুষ ভোজ্য তেল সাশ্রয়ী মূল্যে পান।’