ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে ঝুঁকছে যশোরের কেশবপুরে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা। অল্প টাকা বিনোয়োগ করেই এসব উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন সফলতা। কেঁচো ও সার বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। উদ্যোক্তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থান। চলতি বছরে উপজেলার ৩৩টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা থেকে আনুমানিক ৩৫০ টন সার উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে জমিতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষাসহ মাটির পানি ধারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কম খরচে অধিক ফসল পাওয়ায় কৃষকেরা এখন ব্যাপক হারে কেঁচো সার ব্যবহার করছেন। উপজেলা কৃষি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ উপজেলায় ৩৩টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা রয়েছে। কেউ কৃষি অফিসের প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবার কেউ কেউ স্ব উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কারখানা গুলো তৈরি করেছেন। এ সব কারখানায় গোবর ও কেঁচোর সমন্বয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ২০২৩ সালে এ সব কারখানা থেকে আনুমানিক ২০০ মেট্রিক টন কেঁচো সার উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছরে (২০২৪ সালে) আনুমানিক ৩৫০ টন সার উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কারখানার গোবর ও কেঁচোর হাউজে জন্মানো বাড়তি কেঁচো নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়ে থাকে। কেশবপুর উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো পৌঁছে যাচ্ছে। এগুলো বিক্রি করে এবার ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। জমিতে ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা বাড়ায় এলাকায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে, ঠিক তেমনি তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান।
উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের ভাই ভাই ভার্মি কম্পোস্টের পরিচালক উদ্যোক্তা রাসেল কবির বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে কৃষি অফিসের প্রদর্শনীর মাধ্যমে ১৮টি হাউজ থেকে কেঁচো সার উৎপাদন করেন। এ পর্যন্ত আনুমানিক ৩৫০ মণ সার বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া কেঁচো বিক্রি করে দুই হাজার টাকা কেজি। খরচ বাদে প্রতি মাসে তার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়।
চিংড়া ভার্মি কম্পোস্টের পরিচালক শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতু বলেন, বেকারত্ব দূর করতে কৃষি অফিসের পরামর্শে মাত্র ৫ কেজি থাইল্যান্ডের কেঁচো নিয়ে বছর তিনেক আগে চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা তৈরি করেন। বর্তমানে খামারের ৩৫টি হাউজে প্রায় চার মণ কেঁচো রয়েছে। প্রতি মাসে এসব হাউজে গোবর দিয়ে আট থেকে দশ টন কেঁচো সার উৎপাদন করে থাকেন। ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো বিক্রি করে প্রতি মাসে তিনি এক লাখ টাকার বেশি আয় করছেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, নিজে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি তার কারখানায় ছয় জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। গোবর আনা, হাউজে ঢালা, পরিচর্যা করা, ছাকনির সাহায্যে হাউজের কেঁচো ও সার আলাদা করা, এগুলো পরিবহন করাসহ তারা বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলার ছোট দোরমুটিয়া গ্রামের এহসানুল কবির রাহাত বলেন, স্বউদ্যোগে বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা তৈরি করেছেন। দুইটা বেড ও ১১টি চাড়ি থেকে প্রতিমাসে তার দেড় থেকে দুই টন সার উৎপাদিত হয়। এলাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ারের মাধ্যমে কেঁচো সার বিক্রি করে থাকেন বলে তিনি জানান। উপজেলার ব্রহ্মকাটি গ্রামের কৃষক খন্দকার শফি বলেন, মাল্টা, বেগুন, ফুলকপি, পাতাকপিসহ তার বিভিন্ন সবজি খেতে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে থাকেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট দেয়ার ফলে তিনি অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। এতে যেমন তার খরচও কম হচ্ছে, ঠিক তেমনি নিরাপদ ফসলও উৎপাদন করতে পারছেন। বাজারে তার বিষমুক্ত ফসলের বেশ কদর রয়েছে বলেও জানান। কশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এ উপজেলায় বর্তমানে ৩৩টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা রয়েছে। চলতি বছরে উপজেলার ৩৩টি ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা থেকে আনুমানিক ৩৫০ টন সার উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর অনেক উদ্যোক্তাকে বেকারত্ব ঘুচাতে ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এবং তারা এ কাজে সফলতা পেয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। কৃষি অফিস থেকে এ সব উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কেঁচো সারের জুড়ি নেই। এ জৈব সার মাটির পানিধারণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও উপকারী অনুজীবের সংখ্যা বাড়ায়। ফলে জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব। প্রতিনিয়ত কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।