কক্সবাজারে ৪০০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কক্সবাজার জেলায় এ বছর ১২ হাজার ৩২০ টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এসব সুপারি বিভিন্ন হাটে বেচাকেনার ধুম পড়েছে। ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদিত এসব সুপারির বর্তমান বাজারমূল্য ৪০০ কোটি টাকা। কক্সবাজারে উৎপাদিত সুপারি আকারে বড়। স্বাদে মজা। যার কারণে দেশ-বিদেশে চাহিদা বেশি। এ জেলার উৎপাদিত সুপারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া রপ্তানি হচ্ছে দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর (৮ হাজার ৬৯৪ একর) জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এতে সুপারি উৎপাদিত হয়েছে ১২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ বলছে, নভেম্বর মাসের বাজার দর অনুযায়ী জেলায় ৩৯৬ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়েছে। তবে চাষী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষি অফিসের হিসেবের চেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদন হয় টেকনাফে। এ উপজেলায় এক হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সমুদ্র উপকূলের উখিয়ার জালিয়াপালং, টেকনাফের বাহারছড়া ও সাবরাং ইউনিয়নে। এই তিন ইউনিয়নের সুপারির আকার বেশ বড়, দামও বেশি। টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী আইয়ুব মিয়া বলেন, ‘এক পণ (৮০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। এছাড়া এক কেজি শুকনা সপারির মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সাবরাং ও বাহারছড়ার সুপারি বর্তমানে এক পণ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুপারির সবচেয়ে বড় বাজার বসে মেরিন ড্রাইভ লাগোয়া উখিয়ার সোনারপাড়া বাজারে। সপ্তাহে দুইদিন এখানে হাট বসলেও প্রতিদিনই এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে যান। হাটের দিম পুরো বাজারে সুপারির বড় বড় স্তুপ করেন চাষীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে সুপারির বাজার সরগরম থাকে। সোনারপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী শামসুল আলম ও আবুল কাসেম জানান, ‘সাপ্তাহিক বাজারে এখানে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি হয়। এ বছর সুপারির দাম ভালো। ফলে চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।’ হলদিয়াপালং এলাকা থেকে সুপারি বেচতে এসেছিলেন আবদুল হাকিম (৫০)। তার তিন কানি (এক একর ২০ শতক) জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি তিন লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। আরও তিন লাখ টাকার বেশি সুপারি আছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলার অন্তত ৫০টি বাজারে এখন সুপারিরে বেচাকেনা চলছে। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাজারে পাকা সুপারি বিক্রি চলবে। এরপর শুকনা ও ভেজা সুপারি বাজারে উঠবে। ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সুপারি আমদানি অনেকটা বন্ধ রয়েছে। এতে কক্সবাজারের সুপারির চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ৩৩টি ক্যাম্পও সুপারির বড় বাজার। কক্সবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, এ বছর ফলন যেমন ভালো হয়েছে, দামও পাচ্ছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে চাষও বেড়েছে। কক্সবাজারের আবহাওয়া ও মাটি সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী জানিয়ে ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, সুপারি চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। একটি গাছ কয়েক বছর ফলন দেয়। গাছের গোড়া পরিষ্কার ও শুষ্ক মৌসুমে পানি দেয়া ছাড়া তেমন পরিশ্রম নেই।