শীতকালীন আগাম সবজি আবাদ করে দ্বিগুণেরও বেশি দাম পেয়ে জাজিরা উপজেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলার ছয় উপজেলার মোট সবজি উৎপাদনের সিংহভাগই আবাদ হয় জাজিরায়। প্রতি বছরই তুলনামূলক উঁচু জমিতে অধিক দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা আগাম সবজি আবাদ করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও আগাম শীতকালীন সবজি হিসেবে সিম, বেগুন, টমেটো, করলা, লাউ, ধনেপাতা, লালশাকসহ নানা সবজি আবাদ করেছেন। পাইকার ও কৃষি বিভাগের হিসেব মতে বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এবার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছেন। জাজিরার বেলেযুক্ত দোআঁশ উর্বর মাটিতে ফসল ভালো হওয়ায় অন্য জেলার কৃষকও এখানে এসে জমি ভাড়ায় নিয়ে সবজি আবাদ করছেন। কৃষি বিভাগও কৃষকদের লাভবান করতে মাঠ পর্যায়ে কারিগরি সহায়তা ও সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করে আসছে। জাজিরায় এবার দুইশ’ পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি আবাদ হয়েছে। উপজেলার মুলনা ইউনিয়েনের লাউখোলা গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রতি বছরই আমি বেশি দাম পাওয়ার আশায় একটু উচু জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি টমেটো, বেগুন আবাদ করি। এবার আবাদ মৌসুমে দুই সপ্তাহ ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে কিছুটা বিলম্ব হলেও ফলন ভালো হয়েছে। দামও পেয়েছি এবার সর্বোচ্চ। প্রতিকেজি বেগুন প্রথম পর্যায়ে আড়াইশ’ টাকা ও পাকা টমেটো একশ’ কুড়ি টাকা পাইকারি বিক্রি করেছি। অন্যান্য বছর যেখানে বেগুন সর্বোচ্চ একশ’ টাকা ও টমেটো সত্তর থেকে আশি টাকা বিক্রি করতে পারতাম। আমি তিন বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছি। একই এলাকায় চুয়াডাঙ্গার কৃষক মো. দুলাল বলেন, দশ বছর আগে এখানে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসি। জাজিরার মাটি পলিযুক্ত হওয়ায় এখানে শুধু সবজি না সব ফসলই ভালো হওয়ায় গত দুই বছর যাবত নিজেই জমি ভাড়ায় নিয়ে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আসছি। এবার ১২ শতক জমিতে আগাম সিম আবাদ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতিকেজি সিম পাইকারি দুইশ’ টাকা থেকে বিক্রি শুরু করেছি। এখনো সত্তর টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার মিরাশার গ্রামের কৃষক ফরহাদ খান বলেন, জাজিরার মাটিতে সোনা ফলে। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় উন্নত ও আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি আবাদ করে থাকি। আগাম সবজি বাজারে বেশ ভালো দাম পেয়ে থাকি। এবারো দুই বিঘা জমিতে ধনেপাতা, লালশাক ও লাউ আবাদ করেছি। প্রথম দিকে প্রতিকেজি ধনে পাতা দুইশ’ টাকা, লালশাক নব্বই টাকা ও লাউ প্রতিটি আশি থেকে পঁচাশি টাকা দরে মিরাশার চাষি বাজারে পাইকারি বিক্রি করেছি। জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওমর ফারুক বলেন, জাজিরার জমি পলিযুক্ত দোআঁশ মাটি হওয়ায় বেশ ভালো ফলন হয়। উপজেলার কৃষকদের আমরা জমির ধরণ ও উপযোগিতা অনুযায়ী উন্নত জাত ও নিরাপদ পদ্ধতিতে ফসল আবাদের জন্য কারিগরি সহায়তা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে আসছি। আগাম সবজির বেশি দাম পাওয়া যায় বলে আমরা জমির ধরণ অনুযায়ী কৃষকদেরকে আগাম সবজি আবাদেও উৎসাহিত করছি। সে অনুযায়ী এবার এখানে দুইশ’ পঞ্চাষ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি আবাদ করেছেন কৃষকরা। শীতাকালীন আগাম সবজি বাজারে এখন শেষ পর্যায়ে। এবারই এখানকার কৃষকরা আগাম সবজির সর্বোচ্চ দাম পেয়েছেন। বেশি দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটায় আমরাও বেশ উৎফুল্ল। জাজিরায় এবার এক হাজার চারশ’ ষাট হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ এখন শেষ পর্যায়ে।