সুসংবাদ প্রতিদিন

কোকোপিট চারায় বদলে যাচ্ছে কৃষি

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ.এইচ.এম.আরিফ, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাটি ছাড়াই উন্নতজাতের সবজির চারা উৎপাদন করে সফলতা পাচ্ছেন কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নে মহিষা খোলা গ্রামের মাসুদ রানা (৩২)। চারা উৎপাদনের এই আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় কোকোপিট ও প্লাস্টিকের ট্রে। নারকেলের খোসা থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ‘কোকোপিট’, মাটির বিকল্প হিসেবে চারার চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোকোপিট চারা ব্যবহার করে নিরাপদ ও কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষে ঝুঁকছেন কুমারখালী কৃষকরা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব এই চাষাবাদে ফলন যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষকদের আয়ও বাড়ছে। নারকেলের খোসা থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক উপাদান কোকোপিট, মাটির বিকল্প হিসেবে চারার চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই চারা তৈরি হয়, যা মাটির তুলনায় বেশি পানি ধরে রাখে এবং চারা দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। ‘মাটিতে উৎপাদিত চারা জমিতে রোপণ করলে সতেজতা হারিয়ে যায়। অনেক চারা মরে যায়। সার বেশি লাগে। ফলনও গতানুগতিক। কিন্তু কোকোপিটের চারা কৃষকের জন্য আশীর্বাদ। এটি দ্রুত বর্ধনশীল, ফসলের ফলনও দ্বিগুণ হয়।’ মাসুদের বাড়ির উঠান ও বাড়ির সামনে দেড়কাঠা জমিতে পরিবেশবান্ধব শেডনেট দিয়ে নার্সারি করে। মাটি ছাড়াই পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, বেগুন ও টমেটোর চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। জানা যায়, করোনা মহামারির সময় তার গার্মেন্টসের চাকরি চলে যায়। জীবিকার তাগিদে শুরু করে কোকোপিট পদ্ধতি চারা রোপণ। মাসুদ রানা বলেন, করোনা মহামারিতে ঢাকায় এক গার্মেন্টসের চাকরি চলে যায়।

বাড়িতে এসে বেকার হয়ে ঘুরাঘুরি করে সংসার চলে না। জীবিকার তাগিদে মাটি ছাড়া চারা উৎপাদনের বিষয়টি দেখে উদ্ভুদ্ধ হই। দেশীয় কোম্পানি এগ্রো ওয়ান-এর পরামর্শে এবং কোম্পানি থেকে ট্রেনিং নিয়ে। বীজ চারা উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করে। নার্সারিতে চারা উৎপাদানের কাজ শুরু করি। এই ব্যাপারে এগ্রো ওয়ান আমাকে চরম হেল্প করেছে। মাত্র ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে বাড়ির উঠানে নেটশেড তৈরি করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখানে পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, বেগুন ও টমেটোর চারা উৎপাদন হয়। প্রতি পিস পেঁপে চারা ৪৫ টাকা ও অন্যান্য সবজির চারা প্রতি পিস ২ টাকা দরে বিক্রি হয়। এরই মধ্যে ৩০ হাজার টাকা চারা বিক্রি করেছেন। নার্সারিতে বিক্রির জন্য আরো প্রায় ২৫ হাজার টাকার চারা রয়েছে। সেগুলো দ্রুত বিক্রি হবে বলে আশা করেন মাসুদ।

তিনি আরো বলেন, আমার এই চারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমার কাছে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে অনেকেই চারা নিয়ে যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ দাস বলেন, আধুনিক এই পদ্ধতিতে অল্প জমিতে স্বল্প খরচে গুণগত মানসম্পন্ন অধিক চারা উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হয়। চারা সম্পূর্ণ মাটিবিহীন উৎপাদন হওয়ায় মাটিবাহিত কোনো রোগ হয় না। চারা নেটশেডে ঢাকা থাকায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ নিশ্চিত হয় ও ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় থেকে সবজি চারা রক্ষা পায়।