খাঁচায় বন্দি প্রাণীদের খুব কাছ থেকে দেখার বাসনা মানুষের স্বভাবজাত। তবে শীতে অনেকটাই জবুথবু মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পশুপাখি। শীতে কিছু সংখ্যক পশুপাখি শরীর ফুলিয়ে জবুথবু মেরে বসে আছে। এদের মধ্যে পাখি, বানর, উটপাখি, ময়ূর, বাজরিগারসহ নানা রকমের পাখি রয়েছে। এদিকে, দেশের অনেক স্কুল-কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে হওয়ায় শীত উপেক্ষা করে চিড়িয়াখানায় বেড়েছে দর্শনার্থীর সংখ্যাও। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। সরজমিনে দেখা যায়, বাঘের খাঁচার সামনেও বড় জটলা। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছায়া ও বর্ষা পায়চারি করছে। তা দেখে উচ্ছ্বাসিত শিশুরা। এছাড়া ভাল্লুক, জিরাফ, সাপ, জলহস্তীর খাঁচার সামনেও দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। সকাল ৯টার পরে চিড়িয়াখানার গেট খুলে দেয়া হলেও ভিড় বাড়তে থাকে দুপুরের পরে। দর্শনার্থীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক বেশি। চিড়িয়াখানার গেটের বাইরে হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই চোখে পড়ে বানরের খাঁচা। বড় খাঁচাটির প্রায় দুই ডজন বানরের বসবাস। খাঁচায় থাকা বানরগুলো ঝাঁপ দিচ্ছে ভেতরে থাকা ছোট সুইমিংপুলে। বানরের ছোটাছুটি, পানিতে লাফ দেয়া দেখে উচ্ছ্বসিত হন দর্শনার্থীরা। তবে হঠাৎ খাঁচার বাইরে দুটি বানরের ঘোরাফেরা দেখে বিস্মিত হন দর্শনার্থীরা। চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই প্রথমে বানরের খাঁচা থাকলে এখন বানর নেই। কারণ খাঁচাটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য বানরগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে অন্যত্র। বানর না দেখে শিশুদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছেন অনেক অভিভাবক। বানরের খাঁচা পেরিয়ে গেলে সামনে পেলিক্যান পাখি, সজারু তারপর দুটি বাঘের খাঁচা। একটিতে একটি বাঘ বিশ্রাম নিচ্ছে। আরেকটিতে ছায়া, বর্ষা পায়চারি করছে। বাঘের খাঁচার একটু দূরে সিংহ ও ভাল্লুকের খাঁচা। এ চত্বরে শিশুদের ভিড়ও কিছুটা বেশি। বাবার সঙ্গে বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ১০ বছরের শিশু তিতাস আনন্দ। মোহাম্মদপুরের একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তিতাস। বাঘ দেখেই যেন সে আনন্দ পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সাপ, ময়ূর, ইমু পাখি, জিরাফ ও হাতির খাঁচার সামনেও দীর্ঘসময় কাটাচ্ছেন শিশু ও অভিভাবকরা। গাজীপুর থেকে আট বছরের মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন পোশাক-শ্রমিক শফিক আহমেদ। মেয়েকে তিনি বলছিলেন, বেশিরভাগ খাঁচাই তো ফাঁকা। পশু, পাখি একদমই নেই। এরচেয়ে গাজীপুরের সাফারি পার্কে পশুপাখি বেশি। আবার কেউ কেউ পরিবার সমেত ঘাসের ওপর বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। বাইরে থেকে আনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি খেয়ে নিচ্ছেন। কাউকে ভিড়িও করতে দেখা গেছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে মিনি শিশু-পার্কেও ছিল শিশুদের ভিড়। বাঘ, হরিণের মতো জলহস্তীর খাঁচার সামনেও মানুষের জটলা দেখা গেছে। ছেলে-মেয়েদের সেখানে জলহস্তী দেখাচ্ছিলেন চাকরিজীবী নোমান আল আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, জলহস্তী দেখে শিশুরা খুব আনন্দ পেয়েছে। চিড়িয়াখানার পরিবেশ আগের চেয়েও কিছুটা ভালো বলেও জানালেন তিনি। অগ্রহায়ণ বিদায় বলছে। কয়েকদিন ধরে ঘন-কুয়াশা আর হিম হিম বাতাসে দেশজুড়ে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। শীতে জবুথবু চিড়িয়াখানার পশুপাখি। দুপুরের পর রোদ ওঠায় কিছুটা স্বস্তিতে প্রাণীগুলো।এ বিষয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শীত আসার আগেই প্রাণীদের শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে শীতে কাবু প্রাণীদের দিকে। পাখিসহ বিভিন্ন খাঁচা চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন খাঁচায় বালু ও খড় দিয়ে উষ্ণতা সৃষ্টি করা হয়েছে। চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, শীত বাড়ার আগ থেকেই পশুপাখিরা যাতে কষ্ট না পায় সে ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। পাখিদের খাঁচার ভেতর ছোট ছোট বক্স তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সাপের খাঁচায় খড়কুটো দেয়া হয়েছে। যা তাদের স্বস্তি দিচ্ছে।