বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করেছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। জামায়াত কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি, কেবলই আল্লাহর কাছে মাথা নত করেছে। যার ফলাফল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টের পতন। গতকাল শুক্রবার সকালে দীর্ঘ দেড় যুগ পর সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদরাসা ময়দানে সিলেট জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের আমির বলেন, দীর্ঘ ১৬টি বছর আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আরও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত তবুও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সাম্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের শীর্ষ ১১ নেতৃবৃন্দের কাউকে ফাঁসি দিয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে। জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ফাঁসির রায় দিয়েছে। তবে আল্লাহর ফয়সালায় তিনি জীবিত রয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার পেয়ে তিনি মুক্ত আকাশের নিচে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, এই দেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের দেশ। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ যে ধরনের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন, সেজন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে চেয়েছিল। আমরা বারবার বলেছি এ দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর নামে আর কোনো বিভক্তি চাই না। এর প্রতিফলন গোটা বিশ্ববাসী দেখতে পেয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করেছে। শফিকুর রহমান বলেন, আমরা চাঁদাবাজি-দুর্নীতি করব না, কাউকে করতেও দেব না। এ জন্য জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সর্বত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই।
তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বর্বর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরে তারা ইতিহাসের বর্বর ও আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে গণধিকৃত একটি দলে পরিণত হয়েছে। তাদের জনগণ চায় কি না সেটা শহীদ ও আহতদের এবং তাদের পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যাবে।
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি কখনো আনসার লীগ, কখনো রিকশা লীগ, কখনো চাকরি লীগ আবার কখনো ইসকন লীগ রূপে ফিরে এসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে। তারা শেষমেষ ধর্মীয় দাঙ্গার ষড়যন্ত্রও করেছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণ ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষ আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে। সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাশুক আহমদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলার আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, মৌলভীবাজার জেলার আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সিলেট জেলার নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াত নেতা মহসিন আহমদ, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শরীফ মাহমুদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার, সিলেট জেলা পশ্চিম ছাত্রশিবিরের সভাপতি মারুফ আহমদ, সাবেক ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, সাবেক গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম।