দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে চীনের আমন্ত্রণ
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বেইজিং সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। আগস্টে দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই প্রথম কোনো দেশ দ্বিপক্ষীয় সফরে আমন্ত্রণ জানালো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভ্যন্তরীণ অবস্থান, বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ও ভারতের নেতিবাচক মনোভাব এবং চীনের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে এই আমন্ত্রণকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক সরকার না হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে চীনের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো যোগাযোগ বা প্রতিশ্রুতি দেয়া কঠিন হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতি চীনের আগ্রহকে বৃহৎ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক শক্তি ভারত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি। তাদের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে এক নম্বর শক্তি হওয়ার। ক্ষমতা নিয়ে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীজুড়ে একটি টেনশন থাকবে, এটিই স্বাভাবিক।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে চীন সফরে আমন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নেতিবাচক মনোভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বস্তিকর অবস্থানের মাঝে হয়তো চীন সুযোগ নিতে পারে। তবে এর ফলাফল বুঝতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
জানুয়ারিতে কেন আমন্ত্রণ : ২০২৫-এ বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হবে। এ কারণে সারা বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানসূচি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের আলোচনার মধ্য দিয়ে শুরু করতে চায় বেইজিং। এ বিষয়ে সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিতে ইতিহাস এবং ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও চীন নিকটবর্তী প্রতিবেশী। অন্যদিকে আগামী বছর দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর। ফলে উভয়দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল চীন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার পরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় চীন। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে চীন। বাংলাদেশে তারা বিনিয়োগ করেছে এবং এখনো করছে। বিভিন্ন প্রকল্পেও দেশটি সহায়তা দিয়ে থাকে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অত্যন্ত দৃঢ়। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময়ে ওই দেশের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেয় বাংলাদেশ। বর্তমানে চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ নামক তিনটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
ভূ-রাজনীতি : বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বৃহৎ শক্তিগুলোর আগ্রহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির বড় অংশীদার হচ্ছে ভারত, যার অবস্থান ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের আগ্রহ অনেক বেশি দেশটির নিরাপত্তার জন্য। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। যেখানে ভারতের আগ্রহ, সেখানে চীনের আগ্রহ থাকার কারণ রয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের কারণে ভারতের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। বিষয়টি চীনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’ আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনের স্বার্থ বৃদ্ধি পেলে সেটি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- তিস্তা প্রকল্পে চীন যুক্ত হোক, এটি ভারত চায় না। কারণ সীমান্ত সংলগ্ন নদী হওয়ায় এর ফলে তাদের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ঝুঁকির হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, সংস্কার এবং নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। বৈদেশিক সম্পর্ক কার সঙ্গে কীভাবে হবে সেটি নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকারের ওপর। এ কারণে চীনের আগ্রহ থাকলেও দেশটির সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ হয়তো এখন হবে না।’ সূত্র : বাংলানিউজ