ঢাকা ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমিল্লায় গলায় জুতার মালা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা

জড়িতদের খুঁজছে পুলিশ
কুমিল্লায় গলায় জুতার মালা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা দিয়ে আবদুল হাই কানু নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে গতকাল সোমবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে আগেই জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোমবার এসব তথ্য জানান চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান। এদিকে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা নেতারা।

এদিকে ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা কোথায় আছেন তাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে তার পরিবার জানিয়েছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় অজ্ঞাত স্থানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুলিশ বলছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ আসায় পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিষয়টি তদন্ত ও মাঠে অভিযান চালাচ্ছে একাধিক টিম।

স্থানীয় সূত্র বলছে, মুক্তিযোদ্ধা কানু ছিলেন উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মুক্তিযোদ্ধা কানুর সাথে স্থানীয় সাবেক এমপি ও রেলপথমন্ত্রী এমপি মুজিবুল হকের সাথে ছিল দলীয় বিরোধ। এলাকায় ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলায় তিনি (কানু) ও তার ছিলে বিপ্লব ছিলেন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ মামলায় কানু গ্রেপ্তারও হন। এলাকার লোকজনের সাথে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত করা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এমন ঘটনা জামায়াত সমর্থন করে না। কিন্তু এ ঘটনার সাথে জামায়াতকে জড়িত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সাথে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি আগেও বলেছি প্রবাসী আবুল হাসেমসহ যাদের ভিডিওতে দেখা গেছে তারা আমাদের দলের কোনো পদে নেই।

দলের কর্মী ও সমর্থক হতে পারে। তারা কানুর সাথে ব্যক্তিগত ক্ষোভ কিংবা বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। যারা জড়িত আমরাও তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। যদিও কানুর ছেলে স্থানীয় বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমার বাবা স্থানীয় সাবেক এমপি মুজিবুল হকের সাথে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে হত্যাসহ ৯টি মামলার আসামি হয়েছেন। আমিসহ আমার পরিবারের অনেকেই হামলা হামলার শিকার হয়ে দল ক্ষমতায় থাকলেও গত ১০ বছর এলাকায় আসতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, পেয়ার, বেলাল, ইসমাইল, রাসেল, ফারহান, ফরহাদ, নয়নসহ ১৫-২০ জন আমার অসুস্থ বাবাকে স্থানীয় পাতড্ডা বাজার থেকে ধরে নিয়ে স্কুলের সামনে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিওতে তাদের ছবিও আছে। বাবা আগে থেকেই অনেক অসুস্থ, ঘটনার পর তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কখনোই কারো ক্ষতি করিনি, বরং আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকাছাড়া ছিলাম।’ তিনি আরো বলেন, হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গলায় দিয়ে ভিডিও করেন। তারা জামায়াতের রাজনীতি করে, আর আমি আওয়ামী লীগ করি।

এখন বিচার কার কাছে চাইব, মামলা দিয়ে আর কি হবে।’জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কানু আওয়ামী লীগ করেও বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। কারাগারে গেছেন। তার ভুল ক্রটি থাকলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল।

কিন্তু এভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ জানানো ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা সরকারকে বলবো ১২ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

না হয় সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামবে।

এর আগে গত রোববার দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করা হয়। জুতার মালা ও এলাকায় থেকে ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়ার ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকা এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দেয়া হয়। এ সময় ক্ষমা চেয়ে ও এলাকায় আসবেন না বলে নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তার গ্রামের বাড়ি ঘটনাস্থলের অদূরে লুদিয়ারা গ্রামে।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে ৭-৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম।

তবে ঘটনার পর থেকে জড়িতদের কেউই এলাকায় নেই। কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি জেনেছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত