ঢাকা ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার

মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। তবে এ ঘটনার পর ফেসবুকসহ সামাজিক যোযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ দেখে জেলা ডিবি ও চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে তাদের বিকালে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তার-উজ-জামান এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা গ্রামের ইসমাইল হোসেন মজুমদার, মো. জামাল উদ্দিন মজুমদার, ইলিয়াছ ভূঁইয়া, কুলিয়ারা মসজিদের ঈমাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট গ্রামের আবুল কালাম আজাদ ও চাঁদপুর জেলা সদরের ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ।

হেনস্তার শিকার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ফেনীর আদালত ভবন এলাকায় গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আমরা মামলার আবেদন লিখে কাগজপত্র প্রস্তুত করি। বিকাল ৩টার দিকে সেখান থেকে আমি, আমার বাবাসহ ৩ জন চৌদ্দগ্রাম থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। আমরা আদালত ভবনের গেইটে পৌঁছুলে বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল ও মাইক্রোতে করে আসা ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আমাদের ঘেরাও করে অস্ত্রের মুখে মামলার কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। এসময় আমরা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেই। পুলিশ আমাদের অসহায়ত্বের কথা শুনে নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের ফেনী শহরের বাসায় পৌঁছে দেয়। এ অবস্থায় আমরা এখন জীবনের নিরাপত্তাহীতার মধ্যে করছি।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরের দোয়েল চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এসময় তারা মুক্তিযোদ্ধা হেনস্তাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা স্লোগান দেয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুমিল্লা জেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শৈলপতী নন্দন চৌধুরী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সাবেক কমান্ডার প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী, আবুল হাশেম, আব্দুল বারিক, শামছুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম চৌধুরী নিজাম প্রমুখ। তারা অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবি জানান, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম সদরে অবস্থিত বিএনপির উপজেলা কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ মজুমদার, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুন নবী পাটোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মো. হাসান প্রমুখ।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার-উজ জামান জানান, মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে এ ঘটনায় ভিকটিম থানায় অভিযোগ করেননি।

এর আগে গত রোববার আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করে গলায় জুতার মালা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেন একদল ব্যক্তি। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সর্বত্র নিন্দার ঝড় বইছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত