ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ প্রভাবশালীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে আইনিব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের অনুমোদনের পর গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদক পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান রুমি। চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুদককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যারা জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেয় তাদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ২৪ জনের তালিকা দুদক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও অনুসন্ধানে ৩১ জনের নাম পাওয়া গেছে। দুদকের ওই চিঠিতে ২৪ জনের বিদেশে নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে ওই ২৪ জন সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। দুদক জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা (মন্ত্রী পদমর্যাদা) সালমান এফ রহমানের যুক্তরাজ্য ও সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের রেসিডেন্স কার্ড রয়েছে। এছাড়া দ্বৈত নাগরিক সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ যুক্তরাজ্যের, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ যুক্তরাজ্যের, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু যুক্তরাষ্ট্রের, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত যুক্তরাষ্ট্রের, সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সুইজারল্যান্ড ও জাপানের, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাপানের, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক যুক্তরাষ্ট্রের, সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান কানাডার, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যুক্তরাজ্যের, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম যুক্তরাজ্যের, নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যুক্তরাজ্যের, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
সাবেক এমপিদের দ্বৈত নাগরিকত্ব : দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সাবেক এমপিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ কানাডার, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের, সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল কানাডার, সাবেক এমপি তানভীর হাসান জার্মানির, সাবেক এমপি এমএ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু মালয়েশিয়ার, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী মালয়েশিয়ার, সাবেক এমপি প্রফেসর এম আবদুল্লাহ মালয়েশিয়ার, সাবেক এমপি মাহি বি চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম) কানাডার, শামীম ওসমান কানাডার, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) কানাডার, হাবিব হাসান কানাডার, সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির, এমএ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির, সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ যুক্তরাষ্ট্রের, সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের, সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম) কানাডার নাগরিক।