সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে একটি জাতীয় সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান জনাব কামাল আহমেদ সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ে এ কথা বলেন। তিনি ১৯৯০-এ দেশ গণতন্ত্রে প্রত্যবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যম কতটা ব্যর্থ বা সফল হয়েছে, তা মূল্যায়নের আহ্বান জানান। সংবাদপত্র পরিষদের সদস্যরা সংবাদপত্র যাতে নির্ভয়ে সব ধরনের হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে কাজ করতে পারে, সে জন্য প্রেস কাউন্সিলকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কথা বলেন। ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার ডেইলি স্টার ভবনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সাথে সম্পাদক পরিষদের মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলা হয়। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ কমিশনের সবাই মুক্ত গণমাধ্যমের পক্ষে। তিনি বলেন আইনগত, পেশাগত এবং বাস্তবসম্মত কাঠামোর সুপারিশ প্রয়োজন। সাংবাদিকতার কারণে কোনো সাংবাদিককে সরাসরি গ্রেফতার করা যাবে না। সমন জারি করে প্রাথমিক শুনানির পরেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইউনিয়নের দলীয়করণের কারণে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা হচ্ছে না এবং সাংবাদিকরা বিভিন্ন ধরনের সংগঠন করছে, যাতে দুর্নীতি হচ্ছে। সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দ্য নিউ এইজ-এর সম্পাদক জনাব নুরুল কবির বলেন, সম্পাদনার জন্য ও সাংবাদিকতার জন্য আমরা প্রশংসিত হয়েছি। সবাইকে সাধারণভাবে ব্যর্থ বলা যাবে না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ এ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বলা আছে, এটি আইনের দ্বারা আরোপিত শর্তসাপেক্ষ। আইনের দুটো ধারা আছে, একটা ন্যায্য ও অন্যায্য। এ বিষয়টি স্পষ্ট করার সুপারিশ থাকা দরকার। সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বর্ণিক বার্তার প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, কালো আইন যেগুলো হয়েছে সেগুলো মোকাবলায় সম্পাদক পরিষদের ভূমিকাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে সম্পাদকরা রাজপথে নেমেছিলেন। প্রিন্ট মিডিয়া অনেক সাহস দেখিয়েছে। আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। নির্যাতন ও হয়রানির স্বীকার হয়েছে। কিন্তু তার পরেও তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছে। সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্রের সমস্যার দায় প্রথমত সংবাদপত্রের নিজের। তাকে টেকসই হতে হবে। দলনিরপেক্ষ হতে হবে। পত্রিকাকে আর্থিকভাবে টেকসই করতে হবে। সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক জনাব এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, কিছু সাংবাদিক নেতার লোভ এবং বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কারণে অনেক ক্ষেত্রে পাঠক বিশ্বাস হারিয়েছে। মিডিয়াকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক জনাব সাইফুল আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কারের কাজ সবচেয়ে কঠিন ও দুরুহ। সংস্কারের কাজ বাস্তবায়ন কারা করবে। তিনি গণমাধ্যমে বিনিয়োগের উৎস কী সেই প্রশ্নও তোলেন। সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, সংবাদমাধ্যমে বিনিয়োগের বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীর স্বার্থের বাইরে যাওয়া যায় না। এছাড়া, দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক জনাব গোলাম রহমান, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাকদ বেগম তাসমিমা হোসেন ও দৈনিক সংবাদ এর নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম সভায় বক্তব্য দেন। এছাড়াও উপস্থিতি হিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব আবু তাহের ও দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক মোজাম্মেল হক। কমিশন প্রধান জনাব কামাল আহমেদ এর সঙ্গে এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, জনাব আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, ফাহিম আহমেদ, জিমি আমির, মোস্তফা সবুজ, টিটু দত্ত গুপ্ত।