ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

কমলা চাষে বাড়ছে উদ্যোক্তা

কমলা চাষে বাড়ছে উদ্যোক্তা

দেশের জেলায় জেলায় বাড়ছে কমলা চাষ। আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মানের কারণে উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় চায়না কমলা, দার্জিলিং মাল্টা এবং ম্যান্ডারিন কমলা চাষ লাভজনক হয়ে উঠেছে। চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বদলে যাচ্ছে অর্থনীতির চিত্র। বগুড়ার গোবরধনপুর গ্রামের চাষি আব্দুল আজিজ ২০১৯ সালে চায়না কমলা চাষ শুরু করে উদ্যোক্তার খাতায় নাম লেখান। পরবর্তীতে তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার দেখাদেখি অনেকেই উদ্যোক্তার খাতার নাম লেখার জন্য ঝুকে পড়ে কমলা চাষে। উদ্যোক্তা আব্দুল আজিজ দুই বিঘা জমিতে গড়ে তোলা বাগানে এখন ২০০ গাছ থেকে ফল উৎপাদন করছে। তার বাগানে চায়না, দার্জিলিং এবং ম্যান্ডারিন কমলাসহ লাল আঙুর, থাই আঙুর এবং দেশি জাতের আঙুরও চাষ করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। আব্দুল আজিজ বলেন, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও প্রচুর পরিমাণে কমলা চাষ হয়ে থাকে এটি দেখে কমলা চাষে আগ্রহী হই। সন্তানদের অনুপ্রেরণায় এই যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছি।’ গোবরধনপুর এলাকায় বেশ কয়েকজন ছোট পরিসরে চায়না কমলা চাষ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরীক্ষামূলকভাবে লেবু ও মাল্টা চাষ করেও ভালো ফল পাচ্ছেন। পাশাপাশি আমি তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। সরকারি সহায়তা পেলে এ অঞ্চলে কমলা চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। চাষিরা জানায়, কমলার বাজার চাহিদা অনেক বেশি। বিষমুক্ত ফল হওয়ায় ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে ফলন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আরেক নতুন উদ্যোক্তা কমলা চাষি সনেট হোসেন জানায়, আব্দুল আজিজ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তীতে ম্যান্ডারিন কমলার চাষ শুরু করি এবং ফলন আশানুরূপ পেয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বছর আরও জমিতে কমলা চাষ করব। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে কমলা চাষ আরও সহজ ও ফলপ্রসূ হচ্ছে। ড্রিপ ইরিগেশন এবং আধুনিক সেচ ব্যবস্থার প্রয়োগ চাষিদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। চাষিদের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো উত্তোলিত কমলা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগার এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের অভাব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরির জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। বাজারজাতকরণেও বিশেষ অগ্রগতি হচ্ছে। বিষমুক্ত ও জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফলের কারণে ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মুনাফা বাড়ানোর জন্য চাষিদের উন্নত জাতের চারা বিতরণ, জৈব সার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ এবং ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বগুড়া অঞ্চলের চাষিরা জানিয়েছেন, কমলা চাষে তুলনামূলক কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জন সম্ভব। প্রায় ১ লাখ টাকা খরচে দুই বছরের মধ্যে তিন থেকে চার গুণ লাভ করা সম্ভব। কমলা চাষে স্থানীয় অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত