ঋতুর পালা বদলে এসেছে শীত, এর মধ্যে ধুম পড়েছে, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী কুমড়ো বড়ি তৈরির। সুস্বাধু ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় এর জনপ্রিয়তাও রয়েছে বেশ। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমড়ো বড়ি, বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান স্থানীয়রা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী রসনাবিলাসী কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন রাজশাহী জেলার কুমড়ো বড়ি তৈরির কারিগররা। শীত মৌসুম এলেই এই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। এরার শীতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কুমড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে এ অঞ্চলের শত শত নারী-পুরুষ সচ্ছল জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ অঞ্চলের সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি অত্যন্ত মানসম্মত হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। তবে যত্রতত্রভাবে রাস্তা, পুকুর, খাল, ডোবার পার্শ্বে বাঁশের মাচান করে তার উপর শুকাতে দেয়া হয় বড়ি। সেখানে ধুলাবালি, পোকাণ্ডমাকড় পড়ছে বড়িতে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাতে সচেতন হওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা। জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় শত শত পরিবার এই কুমড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এ এলাকার তৈরি কুমড়ো বড়ি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে এ এলাকার ঈতরি কুমড়ো বড়ি বিক্রি হয়। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিয়াপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কয়েজজন করে নারী একত্রে কাজ করে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন। এর মধ্যে কেউ কুমড়ো বড়ি তৈরির উপাদান একত্রে মাখানোর কাজ করেন। আবার কেউ কাপড়ের মধ্যে তুলে বিশেষ কায়দায় বড়ি তৈরি করেন।
বাকি কয়েকজন বড়ি রোদে শুকানোর কাজ করছেন। পুঠিয়া-তাহেরপুর রাস্তার দুই পাশে, পুকুর, খালের ধারে, মাঠের জমিতে আবার কেউবা বাড়ির ছাদে কুমড়ো বড়ি শুকানোর দৃশ্য চোখে পড়বে। বড়ি শুকানো হলে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। কাশিয়াপুকুর গ্রামের রিনা বেগম বলেন, আগের রাতে মাষ কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর সেই ডালগুলো মেশিন ও পাটায় মাধ্যমে পিষে পেস্ট তৈরি করা হয়। এরপর চালকুমড়ার কুচি, চাউলের গুড়া, পরিমাণ মতো পাঁচফোড়ন গুঁড়া ও সামান্য কালোজিরা দিয়ে উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশ্রণ করে অনেকক্ষণ ধরে মাখাতে হয়। তারপর ছাদ ও পরিষ্কার স্থানে চাটাই, টিন বা কাপড় বিছিয়ে ছোট ছোট করে বড়ি তৈরি করা হয়। এই বড়ি আড়াই থেকে ৩ দিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করে তৈরি করা হয়। কাশিয়াপুকুর গ্রামের হাসিনা বেগম বলেন, শীতের শুরু থেকে আমরা বড়ি তৈরি করি। ভোর রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বড়ি তৈরির কাজ করি। আকাশে রোদ ভালো থাকলে আড়াই থেকে তিন দিন সময় লাগে বড়ি শুকাতে। আকাশ মেঘলা অথবা রোদ কম হলে বড়ি তৈরিতে সমস্যা হয়। কম রোদে শুকানো বড়ির দাম কম হয় বাজারে। বছরে চার মাস বড়ি তৈরি করে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করি আমরা। সরকারি সহায়তা পেলে বড় পরিসরে কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবো। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, কাশিয়াপুকুর এলাকায় প্রায় শতভাগের মতো আমাদের যাদের মা, বোন, মহিলারা আছেন, তারা এই কাজের সঙ্গে সংযুক্ত। এতে করে আমাদের যেমন নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে তেমনি, সামাজিকভাবে একজন মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তেমনি দেশের অর্থনীতিতে পজিটিভ একটি রেজাল্ট নিয়ে আসছে। তবে কুমড়ো বড়ি তৈরিতে আমাদের আরেকটু সচেতন হতে হবে। অনেক অভিযোগ পাওয়া যায় যে খোল জায়গায় কুমড়োর বড়ি তৈরির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা এই ব্যাপারে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করব।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করা হবে। যদি কেউ পুঁজির ঘাটতিতে কেউ ভোগে কারো যদি আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন, যুব অধিদপ্তর এবং মহিলা অধিদপ্তরের প্রজেক্টের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করার সুযোগ রয়েছে।