খরচা বেড়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে প্রায় ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ হয়নি, হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। এবার প্রাথমিক নিবন্ধনই সেরেছেন ৮৩ হাজার ৫৮৭ জন, যা চূড়ান্ত নিবন্ধনে আরো কমতে পারে। তার মানে এবার হজযাত্রী কমছে অন্তত ১ হাজার ৬৭০ জন। আগামী বছরের হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় গত বৃহস্পতিবারই শেষ হয়েছে। এর আগে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হলেও নতুন করে আর সেই সুযোগ দেবে না ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ অনুবিভাগের উপসচিব মামুন আল ফারুক গতকাল বলেন, ২০২৫ সালের জন্য হজের প্রাক, প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়সীমা আর বাড়ছে না। আমাদের শিগগির সৌদি সরকারকে কোটা (নিবন্ধিতদের তালিকা) পাঠিয়ে দিতে হবে। হজ পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, এবারের হজের জন্য যে ৮৩ হাজার ৫৮৭ জন প্রাথমিক নিবন্ধন সেরেছেন, তার মধ্যে সরকারি মাধ্যম বেছে নিয়েছেন ৪ হাজার ৯৮০ জন। বাকি ৭৮ হাজার ৫৪৭ জন বেসরকারি মাধ্যমে হজে যেতে চান। গত ২৫ অগাস্ট ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, হজের প্রাথমিক নিবন্ধন ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। এর মধ্যে সময়সীমা কমিয়ে-বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তা ২৬ ডিসেম্বর বলে ঠিক করা হয়। যারা প্রাথমিক নিবন্ধন সেরেছেন, তাদের আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলেছে সরকার। হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ‘প্রাক নিবন্ধন’ করতে হয়। এরপর ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হয়। তারপর প্যাকেজের বাকি টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা যায়। তবে প্রাথমিক নিবন্ধন চলাকালে কেউ চাইলে প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারেন। হজের কোটা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, হজে মূলত তারাই যায়, যার জন্য ফরজ, যার সঙ্গতি আছে। সেক্ষেত্রে এরকম লোক যদি কম হয়, সেটা তো আর বাড়ানোর সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, তবে এ বছর হজযাত্রী যা আছে, তারা সবাই প্রকৃত হজযাত্রী। কেননা অন্যান্য বারের মতো পলিটিক্যাল হাজী নেই এ বছর। তারপর যারা অবৈধভাবে টাকা-পয়সা কামিয়েছে, এদের মধ্যে অনেকে বারবার হজে যেত, তারা এবার যাচ্ছে না। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাই বলে। খাবার খরচ যুক্ত করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘোষিত সাধারণ হজ প্যাকেজে এবার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা, আর বিশেষ হজ প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর সঙ্গে কোরবানি বাবদ ৭৫০ রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ সঙ্গে নিতে হবে। অন্যদিকে এবার উড়োজাহাজ ভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজের মূল্য কমানো হয়েছে। তবে এবার খাবার খরচ হজ প্যাকেজে ধরা হয়নি। সরকারিভাবে এবার প্যাকেজ-১ এর সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর যারা সাধারণ প্যাকেজ-২ নেবেন, তাদের সর্বনিম্ন খরচ দিতে হবে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। এর সঙ্গে খাবার বাবদ আরও ৪০ হাজার টাকা এবং কোরবানি বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়ালও গুনতে হবে। সেই হিসাবে হজ প্যাকেজের খরচ আগের চাইতে খুব একটা হেরফের হয়নি। তাছাড়া প্যাকেজ-১ এ খরচ কমানো হলেও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে মক্কা ও মদিনা থেকে অনেকটা দূরে। এভাবে সুবিধা কমিয়ে প্যাকেজ মূল্য কমানোর বিপক্ষে হাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী। তার ভাষ্যে, ‘হজের বিমানভাড়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে আরো যৌক্তিক করা যেত। ভাড়া কমানো গেলে হয়তো আরো কিছু হজযাত্রী বাড়ার সুযোগ থাকত।’