ঢাকা ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এক্সপ্রেসওয়ের দুর্ঘটনা

চালকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের ছিল না ফিটনেস

চালকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের ছিল না ফিটনেস

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঘাতক বাসটির চালক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। র‍্যাব জানায়, বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও তিনি নিয়মিত বাস চালিয়ে আসছিলেন। এছাড়াও ঘাতক বাসটির কোনো ফিটনেস ছিল না। এরপরও সেটি চালানো হচ্ছিল মহাসড়কে। গতকাল শনিবার বিকেলে এসব তথ্য জানান র‍্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। তিনি জানান, বাসচালক নুরুদ্দিন গত ২৭ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। বাসটি যাত্রীবোঝাই থাকলেও তিনি দ্রুত পৌঁছানের জন্য বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাতে থাকেন। পরে তিনি সকাল ১১টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষারত একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেন। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারের ৪ জন এবং মোটরসাইকেলে থাকা একজন নারী এবং সাত বছরের এক বাচ্চাসহ ৬জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আরো ১০ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে চালক নুরুদ্দিন র‍্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি গত ১০ বছর ধরে বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ২ বছর ধরেই মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এছাড়াও বাসটির কোনো ফিটনেস সনদও ছিল না।

এছাড়াও দুর্ঘটনার পর বাসচালক কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে অটোরিকশায় করে আব্দুল্লাহপুর যান এবং সিএনজিযোগে নারায়ণগঞ্জে তার ফুপাতো বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। পরে সেখান থেকে র‍্যাব-১০ এবং র‍্যাব-১১ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। র‍্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরো জানান, এই বাসচালককে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই লুকিয়ে ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর চালককে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে একই পরিবারের চারজনসহ দুটি গাড়ির ছয় আরোহী নিহত ও চারজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন মারা যান।

নিহতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলমের স্ত্রী আমেনা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনি (১১), ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২), মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২৬) ও তার ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলম (৪২), তার বোন ফাহমিদা আক্তার (১৭), প্রাইভেটকারের চালক হাবিবুর রহমান (৩৮) ও মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়া (৪২)। দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় আহত ব্যক্তিদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় আহত ১০ জনকে এই হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজন হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যান। আহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের মধ্যে গুরুতর আহত রেশমাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছিল। পরে তারা জানতে পারেন, শুক্রবার বিকেলে সেখানে রেশমার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত