ঢাকা ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

পান চাষে ফিরছে সচ্ছলতা

পান চাষে ফিরছে সচ্ছলতা

টাঙ্গাইলে পান চাষ করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন জহুরুল ইসলাম নামের এক যুবক। দারিদ্র্যতাকে জয় করে সংসারে ফিরিয়ে এনেছেন সচ্ছলতা। বর্তমানে জেলার পান চাষিদের কাছে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে তার পানের বরজ দেখতে ছুটে আসেন অনেকেই। তার সফলতায় অনেক কৃষক পান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে এই জেলার মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী একটি জেলা। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। বাঙালি সংস্কৃতিতে আদিকাল থেকেই খানাপিনার পর পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়নের রীতি রয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিয়েসহ গল্পের আসরের সর্বশেষ পূর্ণতা মিলে পান-সুপারির আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে। সরেজমিন দেখা যায় পানের চাহিদা থাকায় টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মামুদ নগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত সরব আলীর ছেলে জহিরুল ইসলাম বাণিজ্যিকভাবে প্রায় এক বিঘা জমিতে পান চাষ করে এলাকায় বেশ পরিচিতি পেয়েছন। ভিটে বাড়ির উঁচু জায়গায় বাগানে চোখ পড়লেই নজর কেড়ে নেয় পান খেকোদের। বরজের প্রতিলাইনে সূর্যের রশ্নি আলোতে গাছে গাছে চকচক করছে সবুজ রঙের ছোট বড় অকারের পানের পাতাগুলো। সেই বাগানের চতুর্পাশে নেটের জাল দিয়ে বেস্টনি করে রেখেছে। প্রতিটি পানের গাছ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য একটি করে পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। তার সাথে শোলা এবং বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। জানা যায়, অভাব-অনটনের সংসারে অন্যের দোকানে দর্জির কাজ করে সংসার চলে কৃষক জহিরুলের। পাঁচ বছর পূর্বে রাজশাহীতে বেড়াতে গিয়ে পান বাগান পরিদর্শন করেন তিনি। এরপর পান চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেন। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে সেখান থেকে প্রথমে ৫ হাজার মিষ্টি জাতের পানের চারা ক্রয় করে বাড়ির পাশের পালান উঁচু ভিটে বাড়িতে ২৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় প্রথম বছরেই সফলতার মুখ দেখেন তিনি। তার সফলতা দেখে পান চাষে আগ্রহী হচ্ছে অনেক কৃষক।

ভাতশালা গ্রামের জয়নুল আবেদিন বলেন, প্রথম যখন পানের চাষ শুরু করেন তখন গ্রামের অনেক মানুষ তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন।

তিনি বলেন আমাদের নাগরপুরে বেশিরভাগ জায়গা নিচু সেহেতু ধান ও ভুট্টার আবাদ বেশি হয়। তারপরেও এই পানের চাষ উঁচু জায়গায় করতে হবে। সেহেতু আমি ভাবছি আমার বাড়ির পালানে আমি শুরু করব এই পানের চাষ। তিনি আরো বলেন পানের স্বাদ ভাল হওয়ায় তার বাগান থেকেই ক্রয় করেন আশপাশের ব্যবসায়ী দোকানদারসহ পানখেকোরা। তিনি মনে করেন তার মতো আরো উদ্যোক্তা তৈরি হলে নাগরপুরের পানের চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। একই নাসির উদ্দিন বলেন, জহুরুলের মিষ্টি পানের চাষে এখানকার পান খেকোরা এই পানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। অন্য পানের চেয়ে এই পান মিষ্টি এবং সুস্বাদু। তিনি বলেন, এ বাগানে স্থানীয়রাসহ ব্যবসায়ী ও দোকানিরা পান ক্রয় করার জন্য সকাল সন্ধ্যায় ভির জমায়। কিন্তু তাদের চাহিদা অনুযায়ী জহুরুল পান দিতে পারে না। কারণ কিছুদিন আগে বৃষ্টিতে পানের বেশ ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে নতুন পান গজাতে শুরু করেছে, আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে জহুরুল সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। পান চাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, নাগরপুর উপজেলায় তিনিই প্রথম রাজশাহীর মিষ্টি পানের চাষ শুরু করেছেন। তার বাগানে কোনো সমস্যা দেখা দিলে রাজশাহীর চাষিদের পরামর্শ নেন। আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভের পরিমাণ আরো বাড়বে। তবে এ বছর ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে বরজের প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু পানগাছও মরে গেছে। পোকার উপদ্রব ঠেকাতে ওষুধ ছিটানো ছাড়া অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই বলে পান চাষ লাভজনক।

তিনি আরো বলেন, আমার এই পান বাগানে দুই বছরে সব মিলে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। অপরদিকে এই বাগান থেকে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা উপার্জনও হয়েছে। এছাড়াও বাগানে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার পান বিক্রি করার মতো হয়েছিল। সেই সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানে বেশকিছু ক্ষতি হয়েছিল। তারপরও আমি আশা করছি যে পরিমাণে গাছে পান আসছে তাতে এ বাগান থেকে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার মিষ্টি পান বিক্রি করতে পারব। তিনি আরো বলেন, আমি দর্জির কাজের পাশাপাশি এই পান বাগান দেখাশোনা করি। তিনি মনে করেন পান বাগান থেকে তার জন্য বড় একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলায় ৫৬ একর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় পানের উৎপাদন ছিল ১৫৮ মেট্রিক টন, গড় হেক্টর প্রতি ৭ মেট্রিকটন যা আশানুরূপ। জেলায় বর্তমানে ভেরামারা ও এলসি জাতের পান চাষ হচ্ছে। চাষিদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি প্রদর্শনির মাধ্যমে নতুন কৃষকদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন।

এ বিষয় টাঙ্গাইল খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, চলতি বছরে জেলায় ৫৬ একর জমিতে পানের বরজ করা হয়েছে। নতুন কৃষক পান চাষে উদ্বুদ্ধ হলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন।

তিনি আরো বলেন টাঙ্গাইলের মধুপুরে, ধনবাড়ির কিছু অংশে এবং নাগরপুরে একটি জায়গায় পানের চাষ হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন পান একটি অর্থকরি ফসল। তাই নতুন কোনো পান চাষি পেলে তাদের চাষাবাদের উপর আমরা বিশেষ নজর দিয়ে থাকি। এছাড়াও টাঙ্গাইলের মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী। এক্ষেত্রে নতুন পান চাষিদের জন্য আমরা সহজলভ্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত