ঢাকা ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান ট্রেইনি চিকিৎসকদের

অবরোধ অব্যাহত
সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান ট্রেইনি চিকিৎসকদের

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আপাতত ৩০ হাজার টাকা ভাতার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল আন্দোলনরত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। কিন্তু আন্দোলনরত অন্যদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সেই সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। আপাতত ৩০ হাজার টাকা ভাতার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তারা দাবি জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাস থেকেই ৩৫ হাজার টাকার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন্নবী এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ডা. সায়েদুর রহমান স্যারের আমন্ত্রণে আমরা চারজনের একটি প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে ড্যাব-এনডিএফের পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সায়েদুর রহমান স্যার জানান, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমাদের অতিরিক্ত দেয়ার মতো কোনো টাকা নেই, তাই আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে তিনি আগামী জুলাই মাস থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আমরা সেখান থেকে আলোচনা শেষ করে ফিরে এসেছি।

ডা. নুরুন্নবী বলেন, আমরা স্যারের কাছে একটা পার্মানেন্ট সলিউশন চেয়েছি, আমাদের যেন বারবার রাস্তায় নামতে না হয়। স্যার বললেন তোমাদের ৩৫ হাজারই দেব, সেটা জুলাই থেকে। তোমাদের দাবি আমরা মেনে নিচ্ছি কিন্তু আমাদের সময় দিতে হবে। তবে এখানে আসার পর আমরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানুয়ারি মাস থেকেই ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দাবি করছি। এসময় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করলেও দাবি আদায়ে আর কোনো পথ খোলা নেই বলে জানান বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা। তারা বলেন, বিগত সরকার ২০২৪-এর জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি কার্যকর হয় ডিসেম্বরে এসে। তাই এবার কারো আশ্বাসে তারা আন্দোলন ছেড়ে যাবেন না। এর আগে বিকালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে সেটি আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে চালু হবে জানিয়ে বলা হয়, আপাতত ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা। এমনকি সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের চার প্রতিনিধি। তবে শেষ মুহূর্তে আন্দোলনকারী অন্য চিকিৎসকদের চাপের মুখে আবারো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। প্রসঙ্গত, ভাতা বৃদ্ধির একই দাবিতে এর আগে গত ২২ ডিসেম্বরও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন চিকিৎসকরা। তখন পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর আগে ভাতা বাড়াতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর ট্রেইনি চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের একটি অংশ শাহবাগ অবরোধ করে। পরে সরকার ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার ঘোষণা দেয়। ট্রেইনি চিকিৎসকরা এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এদিকে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সেটি চালু হবে আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে। আপাতত ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা। গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকের একটি বিশ্বস্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ হাজার এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডা. জাবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন্নবীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বৈঠকে জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ড্যাব) কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ডা. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লবসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের জুলাই হতে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এর আগে, ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এসময় তারা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের অবরোধের কারণে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসকদের এই অবরোধকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শাহবাগ মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয় সাঁজোয়া যান এপিসি ও জলকামান। প্রথম দফায় আন্দোলনের সময়ের তুলনায় গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়।

একই দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বরও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন চিকিৎসকরা। তখন পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর আগে ভাতা বাড়াতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর ট্রেইনি চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের একটি অংশ শাহবাগ অবরোধ করে। পরে সরকার ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার ঘোষণা দেয়। ট্রেইনি চিকিৎসকরা এই সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দেশের তিনটি প্রধান হাসপাতালসহ রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর একটি শাহবাগ। তবে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নানা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয় স্থানটি। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চিকিৎসকদের আন্দোলনের কেন্দ্রও শাহবাগ। গতকাল সকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ মোড়টি দখল করেছেন রেখেছে পোস্ট গ্রেজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীসহ পথচারীরা। বারবারই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে মুখরিত হচ্ছে শাহবাগ মোড়। তবে চিকিৎসকদের অবরোধের কারণে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। ভিন্ন পথে যেতে হচ্ছে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে। ঢাকা মেডিকেলগামী অ্যাম্বুল্যান্সের যাত্রী আরিফ হোসেন বলেন, গাড়িতে স্ট্রোকের রোগী। ডেমরা এলাকা থেকে নিয়ে এসেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেব। কিন্তু ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে আসার পরেই রাস্তা বন্ধ বলে জানিয়েছে দায়িত্বরত পুলিশরা। সেখান থেকে ছেড়ে দিলেও শাহবাগ পার হতে পারিনি। বিকল্প রাস্তায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে তীব্র ভোগান্তির কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ পথচারীরাও। আফজাল হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, গুলিস্তান যাব বলে মোহাম্মদপুর থেকে বাসে উঠেছি। এখানে আসার পর দেখি রাস্তা বন্ধ। দুই দিন পরপর এখানে কোনো না কোনো আন্দোলন হয়। এর আগেও ডাক্তাররা এখানে আন্দোলন করেছে। শুনলাম তাদের ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজকে দেখি আবার রাস্ত বন্ধ। এর আগে ৫০ হাজার টাকা ভাতার দাবিতে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমবেত হয় পোস্ট গ্রেজুয়েট বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন তারা। অবরোধের ফলে সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ, ফার্মগেট থেকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ অভিমুখী যানচলাচল বন্ধ। বেশিরভাগ গাড়িই শাহবাগ মোড়ের কাছাকাছি পর্যন্ত এসে ফিরে যাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক মো. ইমরান বলেন, আমাদের ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হয়। এই টাকায় বর্তমান সময়ে কি করা যায় বলেন? আমরা কি চিকিৎসক হয়ে ভুল করেছি। এর আগে দাবির মুখে আমাদের ভাতা ৫ হাজার বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু আমরা ৫০ হাজার টাকা ভাতা চাই। আমাদের দাবি যৌক্তিক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। চিকিৎসকদের ‘ঐক্য ঐক্য, চিকিৎসকদের ঐক্য’ ‘চিকিৎসকদের দাবি মানতে হবে, মেনে নাও’, ‘২৪ এর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘দাবি মোদের একটাই ৫০ হাজার ভাতা চাই’, ‘হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাক্তারদের অ্যাকশন’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত