বিনামূল্যে বছরের শুরুতে বই দেয়া শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। বিগত ১৫ বছর বছরের প্রথম দিনে সরকার ঘটা করে বই উৎসব করতো। এটিকে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবেও দাবি করতো। ১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করতেন। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি স্কুলে বড় অনুষ্ঠান করতো।
তাছাড়া বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা, পৌরসভা পর্যায়ে ঘটা করে বই বিতরণে অনুষ্ঠান করা হতো। বই উৎসব ঘিরে বড় অঙ্কের অর্থ বাজেট করতো সরকার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ঘটা করে বই উৎসব করবে না। বই বিতরণ কার্যক্রমও উদ্বোধন করা হবে না। শুধু পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করবে সরকার। আগামী ১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এদিকে, আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় নিজ নিজ স্কুলে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। আলাদা করে কোনো অনুষ্ঠান করা হবে না। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে ঘটা করে বই উৎসব করতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার। অনলাইনে এ কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর সব স্কুলে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে।’
এদিকে বছরের প্রথম দিন এবার নতুন কোনো পাঠ্যবই হাতে পাবে না প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ; যাদের এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। স্কুলগুলোতে পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণেই এই তিন শ্রেণির ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা অন্যদের চেয়ে বাড়বে। প্রাথমিকের অন্য শ্রেণির মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবেন আরও কয়েকদিন পর। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির শুরুতে কিছু বিষয়ের বই পাবেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর কর্মকর্তারা বলছেন, এদের মধ্যে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছাবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তবে এবার বছরের প্রথম দিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে এনসিটিবি। বই ছাপানোর দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু বলেন, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপানোর কাজের ৯৮টির মধ্যে ২৭টি দরপত্রের লটের বই পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগবে। বাকিরা প্রথম দিনই পেয়ে যাবে। চতুর্থ, পঞ্চম ও প্রাক-প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও কিছুটা দেরি হবে। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব বই পাঠানোর চেষ্টা করছি। এনসিটিবির কর্তা ব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ২০ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছে দেবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ১ জানুয়ারি আমরা সব শ্রেণির পরিমার্জিত ৪১১টি বইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে। মুদ্রণের দায়িত্ব পাওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘লেটার এন কালার’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম দিন প্রাথমিকের ৭৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ বই শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি, সেভাবেই কাজ চলছে।’ আর এ শ্রেণিগুলোর অন্যান্য সব বই চলে যাবে ২০ জানুয়ারির মধ্যে। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ের কাজ শেষ করেছি। এখন সপ্তম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইয়ের কাজ করছি। সপ্তম শ্রেণির বইগুলোর কাজ শেষ হলে আমরা চতুর্থ শ্রেণির বইয়ের কাজ শুরু করব।’ লেটার এন কালারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রাথমিকের বইগুলো ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। মাধ্যমিকের তিনটি বই আগে ছাপতে বলা হয়েছে, সেগুলোর কাজ করছি।
নতুন শিক্ষাক্রমে চলতি বছরের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভাগ-বিভাজন ছিল না। তবে পুরনো শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বিভাজন নিয়ে তারা নতুন বছরে দশম শ্রেণিতে পড়বে। সেভাবেই ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে তাদের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, যার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এরইমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এক শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি আর আরেক শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণিতে পড়তে হওয়ায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইগুলো ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ছাপা শুরু হয়েছিলো’ বলে জানিয়েছিলেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।