ঢাকা ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টেকনাফে বন বিভাগের কাজে রোহিঙ্গা শ্রমিক

জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে

অপহৃত ১৮ শ্রমিকের মধ্যে ১৩ জন রোহিঙ্গা, পাঁচজন বাংলাদেশি
জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে

কক্সবাজারের টেকনাফে বন বিভাগের কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ১৮ জনকে অপহরণ করেছে অস্ত্রধারীরা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা হ্নীলার ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড় থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পরও তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে।

অপহৃতরা হলেন, আইয়ুব খান, আইয়ুব আলী, আনসার উল্ল্যাহ, আয়াত উল্ল্যাহ, সামছু, ইসলাম, সামছু, ইসমাইল, মোহাম্মদ হাসিম, নূর মোহাম্মদ, সৈয়দ আমিন, সফি উল্ল্যাহ, আইয়ুব, মাহাতা আমিন, সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ ও রফিক। বাকি এক শ্রমিকের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। অভিযোগ উঠেছে, অপহৃত ১৮ শ্রমিকের মধ্যে ১৩ জনই রোহিঙ্গা। বাকি ছয়জন বাংলাদেশি। সরকারি কাজে রোহিঙ্গা শ্রমিক ব্যবহার নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মূলত, সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাটের জন্য কম মজুরি দিয়ে রোহিঙ্গাদের সরকারি কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অহৃতদের উদ্ধারের পুলিশসহ শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সকালের দিকে হ্নীলা জাদিমোরা পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার ও বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করতে যায় ২১ জন শ্রমিক। কাজ করার সময় ডাকাতদলের সদস্যরা অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে ১৮ জনকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে তাদের উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানান, নিয়মিত বাগান পরিচর্যার অংশ হিসেবে বন বিভাগের কাজে নিয়োজিত ১৮ জন শ্রমিক পাহাড়ে কাজ করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন। খবর পেয়ে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও বন বিভাগসহ স্থানীয় লোকজন পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে। এদিকে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অপহৃত ১৮ শ্রমিকের মধ্যে ১৩ জনই রোহিঙ্গা। অন্যরা বাংলাদেশি। সরকারি কাজে রোহিঙ্গা শ্রমিক ব্যবহার হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি শুনে, তিনি অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বলেন, স্থানীয়দের সাথে রোহিঙ্গারা মিশে গেছে। হয়তো না বুঝে দায়িত্বশীলরা এমন ভুলটি করেছে। আগামীতে এনআইডি জমা নিয়ে শ্রমিক দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন তিনি। পরে টেকনাফে দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি। এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু বন বিভাগের কাজে নয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজেও রোহিঙ্গা শ্রমিক ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত, সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাদের পকেট ভারি করার জন্য কম মজুরি দিয়ে রোহিঙ্গা শ্রমিক ব্যবহার করে আসছে। ফলে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। অন্যদিকে শ্রমকাজে এসে রোহিঙ্গারা সহজেই মিশে যাচ্ছে এবং অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বিষয়টিতে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন। রোহিঙ্গারা সবধরনের অপরাধ কর্মের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ‘সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রশীদ জানিয়েছেন, সম্প্রতি এরা শ্রমবাজারও দখলে নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের কম পারিশ্রমিক দিলে হয় বলে আগে গৃহস্থরা এদের কামলা হিসাবে ব্যবহার করতো। সম্প্রতি সরকারি কাজেও এদের ব্যবহার বেড়েছে। যা উদ্বেগজনক। এদের কারণে সরকারি অফিসও নিরাপদ নয়। খুব কম পারিশ্রমিকে এরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে সরকারি নীতিমালা থাকা দরকার। অন্যদিকে দায়িত্বশীল সূত্র মতে, এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৪৫ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। ৮৮ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, টেকনাফের বাহারছড়া, জাহাজপুরা, লেদা, মুছনি, হ্নীলা, জাদিমুড়া ও হোয়াইক্যং এলাকায় বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন রশিদ জানান, টার্গেট করে অপহরণ করা হয়। আর্থিকভাবে সচ্ছল বা প্রবাসে আত্মীয়স্বজন রয়েছে- এমন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে অপহরণ বেড়েছে। প্রথম দিকে অপহরণের শিকার পরিবারগুলো প্রশাসনের চেষ্টায় তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করত। এতে হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আনাকে বেশি নিরাপদ মনে করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ১০-১২ জনকে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। প্রসঙ্গত এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার দুপুরে সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শনে টেকনাফ এসেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত