বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশের সদস্যদের অনলাইন ভোটে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। আর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনীত হয়েছেন নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রশিবিরের সহকারী নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতির নাম ঘোষণা করেন। নাম ঘোষণার পর নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান ছাত্রশিবিরের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে অনলাইনের মাধ্যমে একযোগে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রশিবিরের সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি ২০২৪ সেশনের জন্য কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে নুরুল ইসলামকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনয়ন দেন। নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি এর আগে যথাক্রমে সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআরএম বিভাগে এমবিএ অধ্যয়ন করছেন। নব মনোনীত সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলামের আগে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক, কেন্দ্রীয় প্লানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট সম্পাদক, কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআরএম বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন। ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে বলা হয়েছে, বিগত জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠনটির অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
আগামীতেও যে কোনো আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন-২০২৪ এর উদ্বোধনী সেশনে জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। চর দখলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও আধিপত্যবাদী বজায় রাখতে ক্যাম্পাসগুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার কবর রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর কোনও চাঁদাবাজ, আধিপত্যবাদ ও দখলবাজের স্থান হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে ছাত্র ও যুবসমাজ কোনও দুঃশাসন মেনে নেয় না। সেটা চব্বিশের অভ্যুত্থানের প্রমাণিত হয়েছে। ‘স্বাধীনতার সাফল্যকে হাইজ্যাক করে একটা রাজনৈতিক দল দেশে এক দলীয় শাসন কায়েম করে রেখেছিল।
কিন্তু ছাত্রসমাজ ১৫ বছরের মাথায় তাদের সেই দুঃশাসনকে পরাজিত করে নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে। বাংলাদেশে আর কোনও আধিপত্যবাদ ও দুঃশাসন এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’ যোগ করেন তিনি। সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সেই মানুষের আকাঙ্ক্ষার জন্য ছাত্রশিবিরকে সব ভয় উপেক্ষা করে ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।’
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ৮ আগস্ট (৫ তারিখ গুলিবিদ্ধ) বুলেটের আঘাতে মৃত্যুবরণ করা রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হানের বাবা মো. মুসলেহ উদ্দিন। এ সময় মঞ্চে ছিলেন- জুলাই বিপ্লবে হওয়া শহীদ আবু সাঈদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ওয়াসিম, উসমানসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা, আওয়ামী লীগ আমলে অত্যাচারে আহত ও গুম হওয়া পরিবারের অনেক সদস্যরা। আরও বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আরও উপস্থিত ছিলেন- নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা শামসুল ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিরা।
শিবিরের সম্মেলনে যারা ছিলেন : সদস্য সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ মাওলানা যায়নুল আবেদীন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শামছুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাওলানা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠন সারজিস আলম।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ছিলেন- আনাদোলু গেঞ্জলিক দেরনেইয়ের সহ-সভাপতি এমরুল্লাহ ডেমির, পেরসাতুয়ান কেবাংসান পেলাযার ইসলাম মালয়েশিয়ার সভাপতি জুল আইমান, হিকমত ইয়ুথ মিশরের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আহমেদ, ইসলামী বিশ্ব যুব ফোরামের সভাপতি ড. আশরাফ আওয়াদ, আংকাতান বেলিয়া ইসলাম মালয়েশিয়ার সভাপতি আহমদ ফাহমি মোহাম্মদ সামসুদিন।
দেশের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের (ববি হাজ্জাজ) সভাপতি মাসুদ রানা জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।