ঢাকা ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টেকনাফে অপহৃত ১৮ শ্রমিক উদ্ধার

ফের আটজনকে অপহরণ
টেকনাফে অপহৃত ১৮ শ্রমিক উদ্ধার

কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে অপহৃত বনের কাজে নিয়োজিত ১৮ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা পশ্চিমের গহীন পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। অভিযানে স্থানীয় জনতার সহায়তায় বনরক্ষী, পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন সদস্যরা অংশ নেন। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা গত সোমবার সকালে পাহাড়ে গাছের চারা রোপন করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন। অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে অপহৃত অন্য ৯ জনের সন্ধানে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান। বনবিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানান, গত সোমবার সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া পাহাড়ে গাছের চারা রোপন করতে গিয়ে বনকর্মীসহ ১৮ জন অপহৃত হন। এরপর অপহরণ চক্রের সদস্যরা মুক্তিপণ দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ফোন দিচ্ছিলো। গতকাল মঙ্গলবার যৌথ অভিযানে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, অভিযানে অপহরণে জড়িত দুইজনকে আটকের পাশাপাশি চক্রটি শনাক্ত করা হয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, উদ্ধার হওয়াদের পাহাড় থেকে থানায় আনা হবে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার এই ১৮ জনকে অপহরণের ঘটনা সংঘটিত হয়। অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুটি অটোরিকশা থামিয়ে চালকসহ আটজনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানান শামলাপুর সিএনজি অটোরিকশার লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম। তিনি বলেন, হোয়াইক্যং থেকে আসা শামলাপুরগামী দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে পৌঁছালে ঢালা থেকে ডাকাতদলের সদস্যরা দুটি সিএনজির চালকসহ ৮ জনকে অপহরণ করে। খবর পেয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা জানান, হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে চালকসহ যাত্রী অপহরণের ঘটনা শুনে অভিযান চালানো হচ্ছে। কতজন অপহরণ হলেন সেটার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। সিএনজি দুইটি উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সোমবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নেরবড় ডেইল এলাকার বাসিন্দার নাজিম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাস্তার মাথা নিজ মুদির দোকান থেকে জসিমকে অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অপহরণের পর এখনো সন্ত্রাসীদের পক্ষে কোন যোগাযোগ করা হয়নি।

জসিমকে উদ্ধারেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা। হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এরপর মুক্তিপণ আদায় করে ধরে নিয়ে যাওযা লোকজনকে ছেড়ে দেয়। সন্ত্রাসীদের দাবি করা টাকা না ফেলে অপহৃরিতদের নানান ধরনের নির্যাতন করা হয়।

এলাকার লোকজন অপহরণ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে আসছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, উদ্ধার ১৮ জন এবং অপহৃত থাকা ৯ জন ছাড়াও গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর এই পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৪টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬৫। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত