ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি চান স্বল্প আয়ের মানুষরা

নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি চান স্বল্প আয়ের মানুষরা

ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনেও উদ্বেগ-উৎকণ্টায় কাটছে রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষের। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নিত্যপণ্যের বাজারের উত্তাপে বর্ষবরণের সব আয়োজন তাদের কাছে একপ্রকার অর্থহীন। নতুন বছরে এসে সরকারের কাছে তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব বেড়েই চলেছে। নতুন বছর, নতুন দিন, নতুনভাবে পথচলা। কৃষক থেকে শ্রমিক, চাকরিজীবী থেকে অর্থনীতিবিদ, সবাই চাইছেন বছরটি হোক স্বস্তির, শান্তির। বাজারে গিয়ে যেন না পুড়ে হাত। কৃষক যেন পায় ন্যায্য দাম। শ্রমিক যেন মজুরিতে না ঠকেন। অর্থনীতি যেন চলে নীতি মেনে। এমন প্রত্যাশা সবার মনে। সরেজমিনে কথা হয় হাশেম মিয়ার সঙ্গে। তিনি রাজধানীতে ১৯৮৬ সাল থেকে রিকশা চালাচ্ছেন। জীবন বদলায়নি তার। শুধু সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে বয়স আর হতাশা। তিনি বলেন, বয়স কম থাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, এই বয়সে এসে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি জানান তিনি। স্বাধীন দেশে নিজের পরিবারের সঙ্গে নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকতে চান। শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহজাহানের বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি। স্ত্রীও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে বয়স্ক ভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী সুবিধা, উভয় থেকেই বঞ্চিত তারা। বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করেও ব্যর্থ হন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে রিকশার গ্যারেজে দিনমজুরের কাজ করেন। নতুন বছরে তার চাওয়া একটাই- সরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়া। কথা হয় ধামরাইয়ের কৃষক মোহাম্মদ লিটুলের সঙ্গে। ২০২৪ সালটা কেটেছে কষ্টে কিন্তু নতুন বছর যেন বয়ে আনে সুখের বার্তা, সেই প্রত্যাশা তার। তিনি বলেন, নতুন বছরে সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ বিলের দাম কমাতে হবে। না হলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে লাভের হিসাব মেলাতে ফের হিমশিম খেতে হবে। একই প্রত্যাশা কৃষক সিরাজুল ইসলামেরও। তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ কমলে শাক-সবজির দামও কমবে। এতে স্বস্তি ফিরবে জনমনে। না হলে গত বছরের মতোই কষ্টে জীবন-যাপন করতে হবে। জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনাই সাধারণ মানুষের চাওয়া। যখন মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১১ শতাংশ ছুঁই ছুঁই, তখন পণ্যের দাম কমাতেই স্বস্তি খুঁজছেন ক্রেতারা। বাগবিতণ্ডা এড়াতে দাম কমানোর পক্ষে বিক্রেতারাও। তারা বলেন, ২০২৪ সাল বাজার লাগামহীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। নতুন বছরে যেন সেটি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।বুক ভরে দীর্ঘশ্বাস ফেলা, দিনে এনে দিনে খাওয়া, স্বল্প আয়ের মানুষের আশা, নতুন বছরে বাড়বে তাদের মজুরি, কমবে জীবনযাপন খরচ। তারা বলেন, বাজারে সব জিনিসের যে দাম, তাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা দায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিত্যপণ্যের ব্যয় কমানোর বিকল্প নেই। মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী শ্রেণির কাছে নতুন বছর মানেই, বাড়ি ভাড়া ও বাচ্চার পড়াশুনায় নতুন খরচ যোগ হওয়া। তারা বলেন, বেতন বৃদ্ধি, চাকরির নিরাপত্তা ও নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তিই নতুন বছরে বড় প্রত্যাশা। অর্থনীতিবিদদের আশা, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় মাত্রায় রাখতে সরকার নতুন বছরে বাজার ব্যবস্থাপনার উপর নজর দেবে। এ জন্য সঠিক পরিসংখ্যানের ওপর জোর দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ বলেন, কেউ যাতে বাজারে কোনো রকম কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত