বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিচ্ছে এবং তাদের ভারতে চলে আসতে উৎসাহ দেয়া উচিত নয়। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের হিন্দুরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিপক্বতার সাথে সামাল দিচ্ছে এবং ভারতীয়দের তাদের এখানে (ভারতে) চলে আসতে উৎসাহিত করা উচিত নয় বলে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গত বুধবার মন্তব্য করেছেন। বিশ্ব শর্মা বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এটা সত্য যে- বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা অতীতে এখানে (ভারতে) চলে এসেছিল, কিন্তু তারা এখন আর আসছে না। তারা বর্তমান পরিস্থিতি পরিপক্বভাবে পরিচালনা করছে এবং তাদের দেশ ছেড়ে চলে আসতে উৎসাহিত করা উচিত নয় আমাদের।’ শর্মা আরো দাবি করেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওভারটাইম কাজ করছেন।
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলার কথিত খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কথিত এসব ঘটনা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগও জানিয়েছে নয়াদিল্লি। এছাড়া বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে আসামে একের পর এক বিক্ষোভ হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আসামে বাংলাদেশের হিন্দুদের আশ্রয় দেয়ার দাবিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলের মতো বেশ কয়েকটি সংগঠন দাবিও জানিয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর ভারতের কট্টর উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) প্রচারক সুমন কুমার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় নেয়ার অনুমতি দিতে বলেছিলেন।
এমন অবস্থায় বুধবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রায় এক হাজার লোক আসামে ধরা পড়েছে এবং প্রতিবেশী ত্রিপুরায়ও একই সংখ্যক লোক ধরা পড়েছে। তবে তাদের কেউই বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু নয়। শর্মার দাবি, মূলত বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরে কর্মরত লোকেরা ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পে চাকরির জন্য ভারতে আসছে। তার দাবি, ‘বাংলাদেশে অস্থিরতার পর সেখানে টেক্সটাইল শিল্প কার্যত ভেঙে পড়ে। তাই ওইসব শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা ভারতে আসতে শুরু করে। আমাদের দেশের অনেক টেক্সটাইল শিল্প মালিক তাদের প্রণোদনা দেয়া শুরু করে এবং বাংলাদেশ থেকে সস্তা শ্রমিক আমদানি করতে অর্থ ব্যয় করে।’
তিনি আরো দাবি করেন, ‘এটি একটি উদ্বেগজনক সমস্যা কারণ আমরা অতীতে এত বেশি অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত করিনি। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যারা এখানে সংখ্যালঘু। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করছি না, আমরা তাদের দিয়ে আমাদের জেল পূর্ণ করতে চাই না, তাই তাদের ফেরত পাঠাচ্ছি।’ এর আগে গত বছর হিমন্ত শর্মা দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে টেক্সটাইল ইউনিটে কাজ খুঁজতে যাচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের প্রস্তাবিত বাঁধ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বাঁধ তৈরি হলে ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে যাবে এবং পানির প্রবাহ অরুণাচল প্রদেশ ও ভুটানে বৃষ্টির ওপর নির্ভর হয়ে পড়বে। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই উদ্বেগ উত্থাপন করেছি।’ ভুটানে নিজের সাম্প্রতিক সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা পানি সংক্রান্ত প্রকল্প, সড়ক ও রেল যোগাযোগের উন্নতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের ব্যবসায়িক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং ভুটানের রাজা আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি আবার আসাম সফর করবেন।’