ঢাকা ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবজিতে স্বস্তি, ফের দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

সবজিতে স্বস্তি, ফের দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম অনেকটাই কমে এসেছিল। তবে সপ্তাহ পার হতে না হতেই পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আমদানি করা আদা ও রসুনের দামও বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা করে। এছাড়া ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটের’ অজুহাতে বেড়ে যাওয়া মুরগির বাজারেও স্বস্তি ফেরেনি। তবে আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দাম নাগালের মধ্যেই আছে। বিশেষ করে ফুলকপিসহ কিছু কিছু সবজি ‘সস্তায় মিলছে’ বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ বাজারে সব ধরনের নতুন আলুর দাম কমেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের পেঁয়াজ ও চায়না আদা-রসুনের দাম। প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজে ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা করে। এছাড়া আজ প্রতি কেজি নতুন সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, নতুন লাল আলু ৫০ টাকায়। নতুন বগুড়ার আলু ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে পুরাতন আলু ও পুরাতন দেশি পেঁয়াজ বা ক্রস জাতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, নতুন দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। মানভেদে প্রতি কেজিতে নতুন দেশি সাদা ও লাল আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা। নতুন বগুড়ার আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজিতে চায়না আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম কেন বেড়েছে জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. শরীফ বলেন, দেশি পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম কম থাকায় কৃষকদের লোকসান হচ্ছে। তাই এখন দাম কিছুটা বেড়েছে।

ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানিয়ে বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, দেশি পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি এখন হচ্ছে না বলা যায়। তাই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

চায়না আদা ও রসুনের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা আমদানি কম হওয়াকে দায়ী করছেন। তারা বলেন, আমদানি কম হলেই দাম বেড়ে যায়। আর ডলারের দামের ওপরও অনেকটা নির্ভর করে আমদানি করা এসব পণ্যের দাম। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি পণ্যের দামও বাড়ে।

স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে : আজকের বাজারে বেশকিছু সবজির দাম কমেছে। পাশাপাশি কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছেও। বাজারে লাল টমেটো প্রকার ভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৬০ টাকা, শিম ৪০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৫০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, লাল মুলা ৪০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৫০ টাকা, গাছসহ পেঁয়াজ ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, বড় ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ টাকা, লেবুর হালি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন সবজি ওঠায় কমেছে দাম : এ ক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনা আজ প্রতি কেজিতে টক টমেটো ২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০ টাকা, শিম ১০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০ টাকা, মুলা ১০ টাকা, পেঁয়াজকলি ১০ টাকা এবং ধনেপাতার দাম ৪০ টাকা কমেছে। এছাড়া প্রতি পিসে ফুলকপি ১৫ টাকা, বাঁধাকপির দাম ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বরবটির দাম কেজিতে ১০ টাকা, কচুরমুখীর দাম ২০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাংসের বাজার চড়া : নতুন বছরের আগমনকে সামনে রেখে বেড়েছিল মুরগির দাম। তবে নতুন বছর চলে এলেও স্বস্তি ফেরেনি মাংসের বাজারে। এখনও ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০০ টাকার ওপরে। কক মুরগির দাম ৩০০ টাকা। অপরদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের থেকে ৩০ টাকা বেশিতে।

আজ প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা। ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৯৭-২০৩ টাকা, কক মুরগি ৩৩৫-৩৩৮ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা, সাদা ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আজ প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগি দাম ৩-৭ টাকা, কক মুরগির দাম ৮-১২ টাকা কমেছে। লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংসের দাম ৩০ টাকা বেড়েছে। খাসির মাংস ও দেশি মুরগি দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। ডিমের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাংসের দাম বাড়তি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. সুলতান বলেন, মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। তবে সেভাবে কমেনি। থার্টি ফার্স্ট নাইট শেষ, এখনও কেন কমছে না তা বলতে পারছি না। এদিকে গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বাজার করতে আসা চাকরিজীবী এহসান হক বলেন, থার্টি ফার্স্টের প্রোগ্রাম শেষ, তাহলে এখন কেন মুরগির দাম কমবে না? আসলে একটা উসিলায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে আর কমাতে চায় না। এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস।

আজকের বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৭০০-২৬০০ টাকা, রুই ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল ৪০০-৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮৫০ টাকা, চিংড়ি ৯০০-১ হাজার ৩০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, কৈ ২৫০-১ হাজার টাকা, পাবদা ৪০০- ৬০০ টাকা, শিং ৪০০-১ হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, বোয়াল ৬৫০-১ হাজার ১০০ টাকা, শোল ৯০০-১ হাজার ২০০ টাকা, মেনি ৮০০ টাকা, চিতল ৬০০-৮০০ টাকা, সরপুঁটি ২৫০-৫০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারও অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে : বরাবরের মতো আজও বাজারের মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। এদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় একমাস হতে চললো। কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়নি এই ভোজ্য তেলের বাজার। তারা যা পাচ্ছেন তা চাহিদার তুলনায় কম।

আজ বাজারে ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৩৫ টাকা, মাশকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত