ঢাকা ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ শতাংশ সফল

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ শতাংশ সফল

দেশের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি দেশ পরিচালনায় গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ শতাংশ সফল বলেও উল্লেখ করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাসের পরিচালনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, আমরা দেশের অশান্ত সময়টা পার করেছি। এখন দেশ অনেকটাই স্থিতিশীল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে। অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। আমলাতন্ত্রেও আমরা স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে এনেছি, যদিও কিছু কিছু জায়গায় এখনও উত্তেজনা চলছে। সব মিলিয়ে দেশ পরিচালনায় গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি ১০০ মধ্যে ৯০ ভাগ সফল বলে মনে করি।

ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটা ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ পেয়েছি, ভঙ্গুর অনেক প্রতিষ্ঠান পেয়েছি, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না শুরুতে। অনেক পুলিশ সদস্যই দায়িত্বে ছিলেন না। এমন একটা সংকট উত্তরণ করে দেশ এই অবস্থায় আসতে পারবে শুরুতে আমরা ভাবিনি। ব্যাপারটা এমন যে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে খুব খারাপ আবহাওয়ায় মধ্যে বড় একটা উড়োজাহাজের পাইলটের সিটে বসিয়ে দেয়া হলো আর ওনাকে বলা হলো, আপনি উড়োজাহাজটার সফল অবতরণ করাবেন। আর উনি সেটা করেছেন।

এমন দাবির পক্ষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতসহ অর্থনীতির উন্নতির প্রসঙ্গ টানেন প্রেস সচিব। বলেন, আপনি যদি রিজার্ভের কথা বলেন এটা কিন্তু দ্রুত বাড়ছে। অর্থনীতির দিকে তাকান, যে খারাপ সময়ের মধ্যে আমরা গিয়েছিলাম, তার উন্নতি ঘটেছে। গত তিন-চার মাসের রপ্তানির দিকে লক্ষ্য করুন, এটা খুব গতিশীল। সেপ্টেম্বরে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ২১ শতাংশ, নভেম্বরে এসে ১৬ শতাংশ রপ্তানি বেশি হয়েছে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের শেষে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা যদি বলি, সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মতোই পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখন।

আইনশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক কি না প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, এ বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। কারণ, আমরা তো চাই অপরাধ আরো কম হোক। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে সরকার? এক-দেড় বছরের মধ্যে সব গোছানো সম্ভব? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এটা নির্ভর করছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর। বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে। কারণ, সবাই মিলে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয় আছে এখানে। নির্বাচন ইস্যুতে তিনি জানান, দুটো সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্তটা এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ন্যূনতম একটা সংস্কার করে নির্বাচন দিলে সেটা আগামী ডিসেম্বরে এবং আরো বেশি সংস্কার চাইলে সময়টা আরো ছয় মাস এগোতে পারে। সংলাপ নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, গোটা বিষয়টা নির্ভর করছে সংস্কার নিয়ে সংলাপটা কেমন হবে, আমরা কতটা সংস্কার করতে চাচ্ছি তার ওপর। সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। বিষয়টা এমন না যে, এক-দেড় বছরের মধ্যে আমাদের প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচিত সরকার এলে তারা এই সংস্কার আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনটা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান কাজ। এই সংস্কারটা আগে করতে হবে। এরই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনীর জন্য কিছু কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে এবং সে কাজটা এগিয়ে নিতে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। ওই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ আছে, যেখানে অধ্যাপক ইউনূস চেয়ারম্যান।রিপোর্ট জমা নিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনগুলোকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর বেঁধে দেয়া হয়েছে। যদিও তারা সপ্তাহে সাতদিন কাজ করেও শেষ করতে পারছেন না, যে কারণে সময় আরো কিছুদিন বাড়তে পারে (সময় ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বেড়েছে)। রিপোর্টগুলো পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে সরকার। এটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেব আমরা।

এই সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিভিন্ন ধরনের অবস্থান, অভিযোগ, বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে সংস্কার ইস্যুতে সরকার একটা বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে কি না প্রশ্নে তিনি বিষয়টি একেবারে নাকচ করে দেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। সবার মতামত এক হবে- এটাও ঠিক না। সবাই সবার মত, চিন্তা-ভাবনাগুলো জানাবেন। জনগণ সেখান থেকে বেছে নেবে কোনটা তাদের জন্য ভালো। এই মতামত আদান-প্রদানের সময় যে কোনো সংঘাত ঘটবে তা আমি মনে করি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত