জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে পরিযায়ী পাখি। ক্যাম্পাসজুড়ে তাদের কলকাকলিতে বিরাজ করে মুখরতা। প্রতিবছর নভেম্বরের শুরু থেকেই শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপালসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করলেও এবারে হাড় হিম করা জানুয়ারিতেও তাদের সরব উপস্থিতি নেই। বিগত প্রায় চার বছরে এসব পাখির আগমন তুলনামূলক হারে কমেছে। কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত বহুতল ভবন নির্মাণ, সময়মতো লেকগুলো সংস্কার না করা, গাছ কাটা, লেকে মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়া, লেকের পাড়ে জনসমাগমসহ নানা অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে পাখি গবেষক ও পরিবেশবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় প্রায় ১৪টি লেকের মধ্যে পরিবহন চত্বরের পাশের লেক, ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টারের (ডব্লিউআরসি) পাশের লেক, নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনসংলগ্ন লেকে এসব পাখির সমাগম বেশি থাকে। কিন্তু বিগত দুই বছরে তুলনামূলকভাবে পাখি আগমনের হার ক্রমাগত হারে কমছে। অতিথি পাখির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর কিছু পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করে। অক্টোবরের মধ্যেই লেকগুলোর কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলা হয়। লেকের পাড়ে জনসমাগম রোধে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া এবং উচ্চশব্দ সৃষ্টি ও গাড়ির হর্ন না বাজানোর জন্য সতর্কবার্তা লিখে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর অতিথি পাখির আগমন এবং সংরক্ষণে প্রশাসনকে সে রকম দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বরং গত বছরের জুনে ভারত সরকারের অনুদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের বর্ধিত ভবন নির্মাণের জন্য পরিযায়ী পাখি ও প্রাণীর অভয়ারণ্য রেজিস্ট্রার ভবনের পেছনের লেকটি ভরাট করে ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম পর্যায়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কেটে লেকটি ভরাট করতে শুরু করে প্রশাসন। তবে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেই নির্মাণ প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে যেহেতু জুলাইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ বড় রকমের একটি পরিবর্তন ঘটেছে তাই এমন সন্ধিক্ষণে এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমনটাই জানিয়েছেন বর্তমান সময়ে দায়িত্বরতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে পরিযায়ী পাখির সম্পর্কে জানা যায়, ‘১৯৮৬ সাল থেকে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি আসা শুরু করে। শীতের সময় ক্যাম্পাসে ১২৬ প্রজাতির দেশীয়, ৯৮ প্রজাতির বিদেশি মিলিয়ে মোট ২০৬ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে ৭৮ প্রজাতির পাখি নিয়মিত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে।লেকগুলোতে সাধারণত হাঁস-প্রজাপতির অতিথি পাখি বসে। সম্প্রতি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী মোট ১২ প্রজাপতির পাখির আগমন ঘটেছে। কিন্তু প্রতিবছর সব প্রজাতি একসঙ্গে আসে না।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি গবেষক অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘পরিযায়ী পাখি আগমনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত হাঁসজাতীয় প্রায় ১২ প্রজাতির পাখি আমাদের লেকগুলোতে এসেছে। গতবছর আমরা প্রায় ৩ প্রজাতির আড়াই হাজার হাঁস জাতীয় পাখি দেখেছি। এবছর এই সংখ্যাটা বেশ কমে গিয়েছে। আমরা এবারের জরিপে প্রায় ১৬০০ থেকে ১৮০০ পাখির উপস্থিতি পেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোর পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা নিজ উদ্যোগে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেকটি পরিষ্কার করেছি। এছাড়াও বাকি লেকগুলো পরিষ্কারের ব্যাপারে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ডোপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র পনের দিন হলো। এরই মধ্যে আমরা প্রকল্প অফিসের পশ্চিম ও রেজিস্টার ভবনের পূর্ব দিকের লেক দুইটি পরিষ্কার করেছি। বাকিগুলো পরিষ্কারের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।