বিদায়ী বছর ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের স্মরণীয় বছরের মধ্যে অন্যতম। যদিওবা গেল বছরে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পালাবদলে কিছুটা প্রভাব পড়লেও তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদায়ী বছরে ৮৯০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করেছে। গত বুধবার (১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। এসময় তিনি এনসিটিতে সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৪ সালে বন্দরের রাজস্ব আয় হয়েছে মোট ৫ হাজার ৫৫ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব বেড়েছে ৮৯০ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় ছিল ৪১৬৫ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে বিদায়ী বছরে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী বন্দরের রাজস্ব উদ্বৃত্ত আছে ২৯৪৮ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এ পরিমাণ ছিল ২১৪৩ দশমিক ১০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর গেল বছর রেকর্ড পরিমাণ কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন টিইইউএস (৩২, ৭৫, ৬২৭) কন্টেইনার এবং ১২৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন (১২, ৩৯, ৮৬, ০১৪) কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে। ২০২৩ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে) এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ২৯৩ টন। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩৮৬৭টি। ২০২৩ সালে বন্দরে জাহাজ এসেছিল ৪১০৩টি। রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান জানান, গেল বছরে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড হয়েছে। এ অর্জন আগে কখনো হয়নি। এটি একটি বিশাল অর্জন। গত বছরের অগাস্ট মাসে জাহাজের অপেক্ষমান সময় ছয় থেকে আট দিন পর্যন্ত ছিল, সেটা আমরা একদিনে নামিয়ে আনতে পেরেছি, জাহাজ সরাসরি বন্দরে চলে আসতে পারছে। যা বন্দরের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যেটাকে ১২ মাসের অর্জন বলছি সেটি মূলত ১১ মাসের। ছাত্র-জনতার মুভমেন্ট, বন্যা, সাত দিন ইন্টারনেট ছিল না। সেসব হিসেব করলে ১১ মাস হয়ে যায়। এটা ১২ মাসের অর্জন ছিল না। এক বছরের হলে আরও বেশি হতো। বন্দরের এই অগ্রগতির পেছনে ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ ছিল মন্তব্য করে চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের ভেতরে শৃঙ্খলা আছে, কোনো যানজট নেই। এর বাইরে আমরা জাহাজের ব্যবস্থাপনাও করেছি। গিয়ারলেস ও গিয়ার্ড ভ্যাসেল ব্যবস্থাপনা করে শতভাগ বার্থ ব্যবহার করে কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। বন্দরের ভেতরে জায়গা বেড়েছে। এজন্য হ্যান্ডলিং দ্রুত হয়েছে। বন্দরকে আরও কীভাবে গতিশীল করা যায় সেজন্য কাজ করছেন জানিয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল মনিরুজ্জামান বলেন, এ বছর রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে, ব্যয়ও হয়েছে কম। আমাদের লক্ষ্য আগামীতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২ থেকে ৩ মিলিয়ন টিইইউস বাড়ানো। এজন্য আমরা কাজ করছি। বন্দরকে নিরাপদ করতে ১৪-১৫ বছর ধরে থাকা বিপজ্জনক কার্গো নিলামের মাধ্যমে ডেলিভারি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ১৫২ কন্টেইনার পণ্য ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে। গত বছর রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে। আবার ব্যয় হয়েছে কম। আমাদের লক্ষ্য আগামীতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ২ থেকে ৩ মিলিয়ন বাড়ানো।