নতুন পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা গল্প, কবিতা, ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে এই অভ্যুত্থানের বিষয়টি বিভিন্ন ধরনের কনটেন্টে সংযোজন করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলবে। ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে, শিক্ষাক্রমের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসারে পাঠ্যবই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ৪১ জন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছে, যেখানে কিছু পুরনো বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে এবং নতুন কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। এ বার পাঠ্যবইয়ে বিশেষভাবে জায়গা পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ কিছু নতুন গল্প-কবিতা এবং প্রতিবাদমূলক ছবি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতি শ্রদ্ধা : পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক একটি লেখায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। লেখাটিতে বাংলাদেশের কৃষকদের অধিকার রক্ষার জন্য তিতুমীর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের শহীদদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহীদরা হলেন আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ অনেক শহীদ যাদের আত্মত্যাগ দেশের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। লেখাটি বলছে, ‘এত ত্যাগের পরও দেশের মানুষ অধিকার পায় না, বৈষম্য কমে না, কিন্তু তাদের ত্যাগ কখনো ভুলে যাওয়া যাবে না।’ এবারের পাঠ্যবইয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সাহিত্যের অংশ হিসেবে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে। কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের প্রতিবাদ : ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ে ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ শিরোনামে একটি লেখায় ১৯৬৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আন্দোলনগুলোর মধ্যে কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। এই লেখায় বলা হয়েছে, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুধু কথা বলে নয়, ছবি আঁকেও করা যায়।’ এতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় দেয়ালে আঁকা অসংখ্য গ্রাফিতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সিঁথি ও তরুণ র্যাপারদের ভূমিকা : সপ্তম শ্রেণির ‘সপ্তবর্ণা’ বইয়ে হাসান রোবায়েতের লেখা ‘সিঁথি’ কবিতাটি যোগ করা হয়েছে, যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে। কবিতার ভাষায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার পথে দেওয়া রক্তের কথা। এছাড়াও সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে তরুণ র্যাপার সেজান ও হান্নানের গান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা : অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে একটি প্রবন্ধ ‘গণঅভ্যুত্থানের কথা’ যোগ করা হয়েছে। এখানে দেশের তিনটি বড় গণঅভ্যুত্থান- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানবিষয়ক আলোচনা রয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘গণঅভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য শুধু সরকারের পতন নয়, সমাজে শান্তি, সমতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।’ অষ্টম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে নারীদের ভূমিকা নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের বিশেষ ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন গৌরবগাথা : আমাদের বিজয় : নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ বইয়ে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামক একটি প্রবন্ধ রয়েছে, যেখানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। লেখাটি জনগণের সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা এবং দেশের নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার সম্ভাবনা বিষয়ে আলোচনা করে। লেখাটি উল্লেখ করে, ‘এবারের অভ্যুত্থান আমাদের জন্য একটি সুযোগ, একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ।’ নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে ‘গ্রাফিতি’ শিরোনামে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে শহীদ নূর হোসেনের ঐতিহাসিক ছবি এবং প্রতিবাদী গ্রাফিতির উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা : পাঠ্যবইয়ে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ও বিষয়বস্তু নানা ধরনের কনটেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এসব কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, প্রতিবাদ ও সংগ্রামের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান জানান, এবারের পাঠ্যবইয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সাহিত্যের অংশ হিসেবে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে।