সুসংবাদ প্রতিদিন

কচুরিপানায় বাড়তি আয়

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

ডোবা-নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়ে সৃষ্টি হওয়া কচুরিপানা অপ্রয়োজনীয় ও আর্বজনা হিসেবে পরিচিত। তবে এই কচুরিপানা এখন আর ফেলনা বা আর্বজনা নয়। নওগাঁয় কুচুরিপানা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে অন্তত ৭০ জন নারী-পুরুষ। এসব শুকিয়ে পাশের জেলা জয়পুরহাটে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে শুকনো কুচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকারত্ব দুর করা সম্ভব। আর এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন নিচু এলাকা হওয়ায় এ বিলে বছরে ৬-৭ মাস পানি থাকে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নেয় কচুরিপানা। এসব কচুরিপানা অপ্রয়োজনীয় ও আর্বজনা হিসেবে পরিচিত। কুচুরিপানা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন নারী-পুরুষ। তাদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এসব শুকনো কচুরিপানা থেকে তৈরি হয় ফুলদানি, কলমদানি, টব, ট্রে, ফলঝুড়ি ও পাপোশ সহ বিভিন্ন পণ্য। ব্যতিক্রম উদ্যোগে লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ী। কর্মসংস্থান হচ্ছে এলাকাবাসীর।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ বিলের আয়তন প্রায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর। যেখানে বছরে একটিমাত্র ফসল ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে। একটি মাত্র ফসলে চলে সারা বছরের ভরণপোষণ। বিঘাতে ফলন হয় অন্তত ২৮-৩২ মণ পর্যন্ত। ইরি-বোরো রোপণের আগে জমিতে জমে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করতে হয়। যেখানে কৃষকদের বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ গুনতে হয়। এছাড়া জমিতে স্তূপ করে রাখা কচুরিপানায় জমির পরিমাণ কমছে। এতে বিঘাতে অন্তত ৩ মণ ফলন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এ বিলে যে পরিমাণ কচুরিপানা হয় তার ২০ শতাংশ কাজে লাগে। বাকি অংশ পচে নষ্ট হয়। যদি কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প হিসেবে জৈবসার তৈরি করা যায় তাহলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে। অপরদিকে কচুরিপানা পরিষ্কারে বছরে কয়েক কোটি টাকা বাঁচবে কৃষকদের। সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী গ্রামের কৃষক বয়জেষ্ঠ্য জাহিদুল ইসলাম। তিনি গত ৩ বছর আগে পাশের জয়পুরহাট জেলায় ঘুরতে গিয়ে শুকনো কচুরিপানা বেচাকেনার বিষয়ে জানতে পারেন। পরে গ্রামে ফিরে স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫০ টাকা মণ হিসেবে কাঁচা কচুরিপানা কিনে নেন। ১২ মণ কাচা কচুরিপানা শুকিয়ে পান এক মণ। যেখানে কেনা এবং শুকাতে খরচ পড়ে অন্তত ১ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে জয়পুরহাট জেলায় গিয়ে ২ হাজার টাকা মণ হিসেবে ১৪-১৫ মণ বিক্রি করেন। বছরে তিনি খরচ বাদে আয় করেন অন্তত ৪ লাখ টাকা। জাহিদুল ইসলাম বলেন- বাড়ির পাশেই বিল। এতে করে কচুরিপানা সংগ্রহে তেমন একটা বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না। অনেকেই নিজ থেকে কচুরিপানা কেটে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। এতে যে বিক্রি করেছে তারও একটা বাড়তি আয় হচ্ছে। এ বিলে বছরে প্রায় ৫ মাস কুচুরিপানা পাওয়া যায়। এসব বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে অন্তত ৭০ জন নারী-পুরুষ। শুকনো কচুরিপানা পাশের জেলায় বিক্রি করছি। তবে কচুরিপানাকে প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা আমার নেই। এটা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায় তাহলে আরো বড় পরিসরে কিছু করার পরিকল্পনা আছে। জলাশয় থেকে কচুরিপানা সংগ্রহকারী আজিজার রহমান বলেন- হাঁসাইগাড়ী বিলের কচুরিপানাকে কেন্দ্রকরে অন্তত ৫-৬ মাস কাজ হয়। যেখানে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় করতে পারি। তবে মহিলারা একটু কম আয় করতে পারে। গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম বলেন- আগে স্বামীর একার আয়ের সংসার চললেও এখন সংসারে সচ্ছলতা ফিরাতে নিজেদেরও আয় রোজগার করতে হয়। ৫০ টাকা মণ হিসেবে কাঁচা কচুরিপানা বিক্রি করা হয়। এতে দিতে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। আবার শুকানোর জন্য আলাদা করে মজুরি পেয়ে থাক। এতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। স্থানীয় গোলাম মোস্তফা বলেন- শুকনো কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে ফুলদানি ও কলমদানিসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা সম্ভব। যা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এতে বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম রবিন শীষ বলেন, কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। আর এ লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুব উন্নয়ন, সমাজসেবা ও মহিলাবিষয়ক অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে নিজেরাই কচুরিপানা থেকে হস্তশিল্প বিশেষ করে ফুলদানি, কলমদানি, টব, পাপোশ ও শোপিসসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি করতে পারবে। এতে করে স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি রপ্তানি করাও সম্ভব হবে। এ শিল্পের সাথে জড়িত সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা করা হবে।