রংপুরের পীরগঞ্জে নির্মাণাধীন জয়ন্তীপুর ঘাট সেতু। গ্রামের মানুষের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিসহ দৈনন্দিন কেনাকাটায় একমাত্র ভরসা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীর হাট। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের এ হাটে যাওয়া-আসায় বাধা করতোয়া নদী। গ্রামের বাসিন্দাদের বছরের আট মাস পার হতে হয় ডিঙি নৌকায়। শুকনো মৌসুমের ভরসা বাঁশের সাঁকো। এ কষ্ট লাঘবে ২০১৮ সালে করতোয়া নদীর জয়ন্তীপুর ও নুনদহ ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে পীরগঞ্জসহ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতির স্বপ্ন দেখছিলেন। তবে ২৮ মাস মেয়াদি প্রকল্পের কাজ ছয় বছরেও শেষ না হওয়ায় তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। দুই সেতুর গড়ে ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্নের পর ঠিকাদার চলে গেছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্প দুটির জন্য ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। একটি সেতুর কাজ ফের শুরুও হয়েছে। তবে বর্ষায় তীব্র স্রোত থাকায় কাজ করতে বেগ পেতে হয় ঠিকাদারদের। তবে বছরের অন্য সময়ও ঢিমেতালে কাজ চলে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে জানা গেছে, করতোয়া নদীর ওপর জয়ন্তীপুর ঘাটে ২৯৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক আট মিটার প্রস্থ ফুটপাতসহ সেতু নির্মাণে ২৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পীরগঞ্জ সীমানায় ৩৮৭ মিটার ও নবাবগঞ্জে ৪৫০ মিটার সংযোগ সড়কও রয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় নুনদহ ঘাটে ৩০১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক আট মিটার প্রস্থের ফুটপাতসহ সেতু এবং পীরগঞ্জে ২৫০ মিটার ও দিনাজপুরের সীমানায় ১৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ ২৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর-দিনাজপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করাসহ দুর্ভোগ লাঘবে সেতু দুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ পায় চট্টগ্রামের পিপিএলজেভি ও প্যান্স লাইন্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা ২০১৮ সালের ৯ মে কাজ শুরু করে, যার মেয়াদ ছিল ২৮ মাস। ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও নুনদহ ঘাট সেতুর ৪৪ শতাংশ এবং জয়ন্তীপুর ঘাট সেতুর ৩৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে তারা অপারগতা প্রকাশ করে। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ না করায় জরিমানা দিতে হয়েছে তাদের।
সরেজমিন দেখা যায়, জয়ন্তীপুর ঘাটে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো বা ডিঙি নৌকায় নদী পার হচ্ছেন মানুষ। তবে ভারী পণ্যবাহী যান ও রোগীদের যেতে হচ্ছে বিকল্প পথে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলে জয়ন্তীপুর ঘাট পেরিয়ে সহজে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে যাতায়াত করেন তারা। তবে বর্ষাকালে নৌকা একমাত্র ভরসা। এ সময়ে জনপ্রতি ৪০ টাকা আর শুকনো মৌসুমে ৩০ টাকা নেয়া হয়। সাঁকোয় দিতে হয় ২০ টাকা। স্থানীয় সোদপুর গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সেতু না হওয়ায় সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। এ অঞ্চলের মানুষের স্বার্থে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি তাঁর। একই ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নুনদহ ঘাট সেতু এলাকার দুই পারের মানুষের। পীরগঞ্জের চতরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিপন চন্দ্র বলেন, ঘাটের ওপারে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা। বেশির ভাগ গ্রামের মানুষের যাতায়াত রয়েছে পীরগঞ্জের চতরা হাটে। এলজিইডি পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমানের দাবি, গড়ে সেতু দুটির ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যতটুকু কাজ করেছে, তাদের সে পরিমাণ বিল দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়াসহ অপারগতা জানালে চুক্তি বাতিল করা হয়। তাদের ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। ফের দরপত্র আহ্বানের পর নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাসে নির্মাণকাজ শেষ হবে।