ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আলোচিত অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব বুধবার এ আদেশ দেন। দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন বলেন, হারুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন ওই আবেদন করেন। আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে। আবেদনে বলা হয়, ‘মামলা তদন্তকালে দেখা যায় যে, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) আসামি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার ৮০৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ‘মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কর সার্কেল-১২৯, কর অঞ্চল-০৬, ঢাকার টিআইএন-৫১২১৪৭১১৩২৭০-এর সকল আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।’ এর আগে গত ২২ অক্টোবর হারুন অর রশীদ ও তার পরিবারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে চেয়ে দেশের সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। সেখানে হারুন ছাড়াও তার মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়। এর আগে হারুন ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছিল বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। হারুন অর রশীদের সম্পদের তথ্য খুঁজতে সরকারের ৬৩ সংস্থায় চিঠি পাঠিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হারুনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধ-শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও জেদ্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন অর রশীদ। গণআন্দোলনে সরকার পতনের চার দিন আগে গত ৩১ জুলাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকার পতনের পর থেকেই তার হদিস মিলছে না। ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাইয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করতেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এ কর্মকর্তা। সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ‘নিরাপত্তা’ দেয়ার নামে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন হারুন। তাদের আপ্যায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে। এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আলোচনায় আসেন হারুন অর রশীদ।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে বেদম পিটুনির ঘটনায় আলোচিত হন। পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়। নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি এ জেলার অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। ২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনায় আসেন তিনি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়। ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদন্নোতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।