বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আকারের দিক থেকে শৈত্যপ্রবাহটি মৃদু থেকে মাঝারী হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
ওই সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা গড়ে দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ইতোমধ্যেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, যা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তাপমাত্রা কমতে থাকায় বাড়ছে কুয়াশা, যার দাপট দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। ঘন কুয়াশার কারণের বুধবার ঢাকাসহ বেশিরভাগ জেলায় দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায়নি।
এর মধ্যেই বইছে হিমশীতল বাতাস, যার ফলে জনজীবন বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ। শিশু ও বৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত কয়েকদিনে ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জেলা শহরগুলোতেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থা আর কতদিন থাকবে? বেশ কয়েকদিন বিরতির পর সারা দেশে আবারও শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে।
গতকাল বুধবার ঢাকাসহ প্রায় সব জেলায় লম্বা সময় ধরে ঘন কুয়াশা লক্ষ্য করা গেছে। ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতাও। অথচ শৈত্যপ্রবাহ এখনও শুরু হয়নি বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, এটাকে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বলক্ষণ বলা যেতে পারে। পরের কয়েকদিন সারা দেশের গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যেই ঢাকার তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, শহরটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে ১২ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর চেয়ে সামান্য বেশি ছিল শ্রীমঙ্গলে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা বাড়তেও দেখা গেছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলোতেও তাপমাত্রা খুব একটা কমতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারপরও জেলাগুলোতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
শৈত্যপ্রবাহ শুরু কবে?
গতকাল বুধবার রাতে থেকেই সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এসময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে, যা পরবর্তী দুই-তিন দিন পর্যন্ত চলতে পারে।
সব মিলিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারির মধ্যে দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার একটি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সেটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। খুব স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে পারে।
উল্লেখ্য যে, তাপমাত্রা আট থেকে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
এছাড়া ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
১৪ই জানুয়ারির পর আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এর কয়েকদিন পর জানুয়ারির শেষ দশ দিনে আরো এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।
ওই সময় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাঙ্গায় শীত বেশি অনুভূত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।