জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতিটি সেকেন্ডের ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায়, ইতিহাসের কোনো বিকৃতি যেন না হয়। সেজন্য ক্যাম্পাসভিত্তিক জুলাইয়ের ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। প্রেস সচিব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে ইতিহাসকে যে যার মতো বিকৃত করেছে। জুলাইয়ের ইতিহাসকে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যেন আজ থেকে ৫০ বছর পরও এ ইতিহাসকে যেন চাইলেই বিকৃত করতে না পারে।
জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি আরো বলেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছিল আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হতো, তাহলে ২ লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো। তখন ন্যারেটিভ হতো কিছু দুর্বৃত্ত দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। শফিকুল আলম বলেন, জুলাইয়ের মতো মহৎ সময় আমাদের জন্য আগে আর আসেনি। আমাদের সাংবাদিকরা ১৯৭১-এর যুদ্ধ কতটুকু দেখেছে আমি জানি না।
আমাদের এক কোটি লোক শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মানবেতর জীবন ও দুঃখ দুর্দশা নিয়ে খুব কমই লেখা পাওয়া যায়। এসব নিয়ে আমরা স্টোরি করিনি। আমাদের রাইটিংয়ের অভ্যাসটা খুব কম। লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, শেখ হাসিনা বৃহত্তম জেলখানা, বৃহত্তম গোরস্তান তৈরি করেছিল। এতেই বোঝা উচিত ছিল তাদের উদ্দেশ্য কী। শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী তারা ফ্যাসিবাদের এক ধরনের সহযোগী ছিল। ফ্যাসিবাদ কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, ফ্যাসিবাদ হলো জমিদারি ও কর্তৃত্ব। আমরা সেই জমিদারি ও কর্তৃত্বের অবসান করতে চাই। আমাদের ভিশন (লক্ষ্য) হবে জাতীয় ও জনগোষ্ঠীর স্বার্থকেন্দ্রিক।
অনুষ্ঠানে জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, স্বৈরাচার ইতিহাস আমরা যা দেখেছি, তা বর্ণনা করতে গেলে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। স্বৈরাচারীরা যখন একটা ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তখন বলা হত, ছাত্রদল অথবা শিবির মরেছে। জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি আসাদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।