বাংলাদেশে সংষ্কার কাজ শেষ করে দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহাতার আশ্বাস দিয়েছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে নাসির উদ্দিন কমিশনের সঙ্গে বিদেশিরা একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহায়তা করতে আগ্রহী ইউএনডিপি। সেই লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। বেলা সড়ে ১২টায় ইসিতে বৈঠকে বসবে দুই পক্ষ। ইসির কোনো চাহিদা আছে কি-না, থাকলে কী করে সহায়তা দিতে পারবে সংস্থাটি সে বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহায়তা করতে আগ্রহী দেখায় ইউএনডিপি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত সংসদ নির্বাচন চায় বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ভোট নিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যখন নির্বাচন দিতে বলবে, সে অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। এজন্য ভোটার তালিকা করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর গণমাধ্যমকে এরই মধ্যে জানিয়েছে, সংস্কার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্বচ্ছতার সঙ্গে গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আমরা প্রাথমিক সাক্ষাৎ করেছি। আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন জানায়। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে জাতিসংঘ কি ধরনের টেকনিক্যাল সহায়তা দিতে পারে, সেই বিষয়ে সিইসির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে গঠিত হয়েছে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থন পাবে। আমরা এই কমিশনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করব।
সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কোনো তথ্য আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন লুইস বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সাক্ষাতে কোনো আলাপ হয়নি। এই সিদ্ধান্তটি অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করবে। আমরা শুধু টেকনিক্যাল বিষয়েই কথা বলেছি।
অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে তুরস্কের সাবেক তিন সংসদ সদস্য (এমপি) সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নয়নে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করতে চায়।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, এটি ছিল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। পাঁচ জনপ্রতিনিধির মধ্যে তিনজন তুরস্কের সাবেক এমপি, একজন আইনজীবী এবং একজন তুরস্কের দূতাবাসের প্রতিনিধি ছিলেন।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রতিনিধি দলটি এরই মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারই অংশ হিসেবে আমাদের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা আগামীর জন্য কী ভাবছি, আমরা কী করতে পারি, দু’দেশের মধ্যে নির্বাচনি যে বিষয়াদি আছে, একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পরস্পর পরস্পরকে কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য সহযোগিতা করতে পারি, কীভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য তারা পরামর্শমূলক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের নির্বাচনি ব্যবস্থা কীভাবে এত সুন্দর হলো আমরা জানতে চেয়েছি এবং আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছি তারা উত্তর দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, দুই দেশের নির্বাচনব্যবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য থেকে থাকলে এগুলোকে চিহ্নিত করে কীভাবে আমাদের নির্বাচনব্যবস্থাকে উন্নত করা যায় এবং সর্বোপরি জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য যা কিছু করার দরকার তাদের মতামত আশা করেছি। এই দলটি কোনো সরকারি প্রতিনিধি দল নয়, এই ডেলিগেশনটি একটি এনজিও। যারা নির্বাচন এবং মানবাধিকারের ওপর কাজ করে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন দিতে চায়। নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক একটা অনিশ্চয়তা যখন দেখেন কেউ, তখন কিন্তু সেখানে ইনভেস্ট করতে আসতে চান না সহজে। এটা আমাদের জন্য একটা কঠিন কাজ সামনে। আমরা আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি একটা (নির্বাচনের) রোডম্যাপ এসে যাবে। তখন আস্থা ফিরে আসবে, আমাদের যারা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আছেন।
প্রবাসীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত এবং জাতীয় পার্টিও ক্ষেত্র বিশেষে, তাদের সমস্ত বিশ্বে শাখা আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন দুই দল বা তিন দল প্রচণ্ড শত্রু ভাবাপন্ন, একই রকম শত্রু ভাবাপন্ন আমাদের প্রবাসীদের যারা এই দলগুলোর সাথে যুক্ত তারা। ব্যক্তি ও দলভিত্তিক হয় আমাদের রিঅ্যাকশনগুলো এটা আমাদের বিরাট ক্ষতি করছে, আমাদের ইমেজের ক্ষেত্রে এবং ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে।