প্রচণ্ড শীতে দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এতে বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। এর ফলে সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট বেডের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা। চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস সমস্যা দেখা দেয়। এবার ডেঙ্গুর পরেই শিশু শীতজনিত রোগে ভুগছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। যাদের জটিলতা বেশি, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে শীতজনিত ফ্লু ও আরএস ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রেসেপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অ্যাজমাজনিত পালমোনারি প্রবলেম, জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে আসছেন। অনেকের অবজারভেশনে ভর্তি করা হচ্ছে। অনেকের পরিস্থিতি বুঝে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়েই বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম এবং ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায় ফ্লু, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশু অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না, বাড়ির বাইরে অহেতুক বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। শিশুর ঠান্ডা লাগলে, কাঁশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, কামরাঙ্গীচর থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছে ৭ মাস বয়সি শিশু খালিদ হাসান। গত ১৮ ডিসেম্বর শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে। এখনো চলছে তার চিকিৎসা। সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিদিন তিনবার নেবুলাইজার করার ফলে অবস্থা আগের থেকে কিছুটা উন্নত।
শুধু খালিদ নয়, এমন প্রায় শতাধিক শিশু ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে হাসপাতালটিতে।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, বর্তমানে শীতের সঙ্গে বায়ুদূষণও যোগ হয়েছে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু শিশু বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়লে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।