উত্তরাঞ্চলের শিম আবাদে খ্যাত বগুড়া। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ ভরা মাচায় শিমের বাগানে রঙিন ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। বগুড়া জেলায় এবার ৭১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন শিম ফুল। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় চলতি শীতে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শত শত হেক্টর জমিতে শুধু শিম আর শিম। আবার ফুলের মাঝে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা সবুজ শিম। মনে হয় এ যেন প্রকৃতির নান্দনিক ফুলের বাগান। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক নজিবুল ইসলামের মাচায় ওঠা শিমের সবুজ বাগানের দৃশ্য এমনই মনোমুগ্ধকর। জানা যায়, বগুড়া জেলার শেরপুর, ধুনট, শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, কাহালুসহ অন্যান্য উপজেলার মাঠজুড়ে শিমগাছ শোভা পাচ্ছে। এর মধ্যে সেেবচয়ে বেশি শিমের আবাদ হয়েছে শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায়। এই এলাকার কৃষকরা শিমের দাম ভালো পাবার আশায় প্রচুর পরিমাণ আবাদ করেছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত শিমের বীজ বপন মৌসুম। সবুজ লকলকে গাছের মাথায় শিম চাষিদের মনে আনন্দের দোল দিচ্ছে। এবার শুরু থেকেই বাজার ভালো। তবে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল চাষিদের কপালে। শত রোগবালাইয়ের মাঝেও থেমে নেই শিম গাছের পরিচর্যা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে দিন দিন শিম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এবার শিমের ফলন বাম্পার হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শাজাহানপুর উপজেলার শিম চাষি নজিবুল ইসলাম জানান, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে জমি তৈরি, হালচাষ, রাসায়নিক সার, জৈব সার, কীটনাশক, মাচায় ও শ্রমিকের খরচসহ মোট ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে শিম বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। এবার বাজারে ভালো দামে শিম বিক্রি করছেন তিনি। শুরুর দিকে প্রতি কেজি শিম পাইকারি বাজারে ১২০-১৫০টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত শিম আসায় প্রতি কেজি শিমের দাম ৬০-৮০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। আরো শিম রয়েছে বিক্রির জন্য। এই এলাকায় টেপা, চাইনিজ ও পান্টি জাতের শিমের আবাদ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছেন তিনি। তিনি আরো জানান, শিম বাগানে প্রতিনিয়ত কয়েকজন শ্রমিক কাজ করে এবং ২ থেকে ৩ দিন পর পর খেত হতে শিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করি। ৪ থেকে ৫ দিন পর কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারা জমি থেকেই শিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শেরপুর উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী মো. এনামুল হক জানান, জমি থেকে শিম কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। বগুড়ার শিমের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মণ শিম ক্রয় করেন তিনি। শিম চাষিদের পরামর্শ দিতে মাঠ ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা শিম চাষে ঝুঁকছেন। শিম চাষে রোগবালাই, পোকা আক্রমণে রক্ষায় বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহারসহ কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।