সচিবালয়ের চারপাশ ঘিরে সমাবেশ-মানববন্ধন

চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অনশনে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইরা

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের চারপাশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভণ্ডসমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এতে সচিবালয়ের সামনে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। এখন সচিবালয় এলাকা পরিণত হয়েছে দাবি আদায়ের প্রধানতম স্থানে। সচিবালয়ের সামনে নিজেদের দাবি আদায়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শকরা (এসআই)। গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। অব্যাহতি পাওয়া এসআই মো. আকাশ বলেন, আমাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়। কিন্তু তারা দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস দেয়নি। সেজন্য আমরা অনশনে বসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। অবস্থান কর্মসূচিতে আসা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, খুবই তুচ্ছ অভিযোগে আমাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পুলিশ একাডেমি সারদার ইতিহাসে একসঙ্গে এত মানুষের অব্যাহতি দেয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হোক। সচিবালয়ে ১নং গেটের বিপরীতে উসমানী উদ্যান সংলগ্ন রাস্তায় অনশন কর্মসূচি পালন করছেন অব্যাহতি পাওয়া ক্যাডেট এসআইরা। এর আগে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তারা আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।

অব্যাহতি পাওয়া ক্যাডেট এসআই নিশিকান্ত বলেন, মনে হচ্ছে আমাদের কোনো অভিভাবক নেই। রাষ্ট্র আমাদের নাগরিক মনে করে কি না জানি না। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলতে থাকবে। ৪৩তম বিসিএসে যারা বঞ্চিত তাদের দাবিগুলো পুলিশের মাধ্যমে ভেতরে পৌঁছাচ্ছে কিন্তু আমাদের মেসেজগুলো সেভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না জানি না। কল্যাণ সরকার নামে একজন বলেন, সবাই মিলে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব। কেন আমাদের বাদ দেয়া হয়েছে আমরা বলতে পারছি না। এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছি কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। হঠাৎ আমাদের ডিসচার্জ লেটার ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো রাজনৈতিক ছোঁয়া নেই। আমার বাবা ছিলেন একজন সেনাবাহিনীর সদস্য। আমি যেসব প্রতিষ্ঠানে পড়েছি সেখানে রাজনীতিরই সুযোগ ছিল না।

অব্যাহতি পাওয়া ক্যাডেট এসআই রবিউল রবি বলেন, আমাদের যেন দেখার কেউ নেই। আমাদের ভাইয়েরা-বোনেরা যোগ্যতার মাপকাঠিতে টিকে একটি চাকরি পেয়েছে। আজ তারা ঢাকার রাস্তায় এ শীতে জবুথবু হয়ে অনশন পালন করছেন। এরপরও কি আমাদের প্রতি রাষ্ট্রের দয়া হয় না?

সুবীর নামে অব্যাহতি পাওয়া আরেক ক্যাডেট এসআই বলেন, একটা চাকরির জন্য আজ আমরা রাস্তায়। আমাদের কি দোষে এত বড় শাস্তি দিচ্ছে জানি না। আমাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। আমরা এখনো অনশন করছি। দাবি পূর্ণ না হওয়া অবধি এটা চলবে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি এখনো নির্ধারিত হয়নি। আমরা চাই এর একটা যথাযথ সুরাহা হোক, এ যন্ত্রণার অবসান হোক।

এর আগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৩১০ এসআইকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অব্যাহতি দিয়ে ক্যাডেট এসআইদের যে চিঠি দেয়া হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই/২০২৩ ব্যাচে গত ২০২৩ সালে ৫ মে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্যারেড মাঠে গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিট থেকে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রফেশনালস ব্যাচণ্ড২০২৩ এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন প্যারেড কার্যক্রম চলমান ছিল। এসময়ে পুলিশ একাডেমি কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত মেন্যু অনুযায়ী প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব প্রশিক্ষণার্থীকে প্যারেড বিরতিতে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু আপনি (প্রশিক্ষণার্থী এসআই) ওই সরবরাহ করা নাশতা না খেয়ে হৈচৈ করে মাঠে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। আপনি অন্য প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের পরস্পর সংগঠিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয়প্রতিপন্ন করে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এছাড়াও আপনি অন্যদের সঙ্গে হৈচৈ করতে করতে নিজের খেয়াল খুশিমতো প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান।