ঢাকা ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চীন সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

তিস্তা নদী প্রকল্পসহ যেসব প্রাধান্য পাবে

তিস্তা নদী প্রকল্পসহ যেসব প্রাধান্য পাবে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করার লক্ষ্যে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফরে আজ চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সফর করছেন। গত বছরের আগস্টে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর’ হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে। পাঁচ দিনের এই সরকারি সফরে ঋণের সুদের হার কমানো, পানিপ্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়, চিকিৎসা সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া এবং মিয়ানমার পরিস্থিতির সমাধানে চীনের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

তৌহিদ হোসেন মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ঢাকার পূর্বের অনুরোধ পূরণ করে হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বিনিময়ে একটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষর করতে বেইজিং প্রস্তুত।

এই সফরকালে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও আলোচনা প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনকে অগ্রাধিকার দেয়ার এ সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার একটি উল্লেখযোগ্য ইঙ্গিত বহন করে। পূর্বে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রায়শই ভৌগলিক ও রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে ভারতকে তাদের প্রাথমিক গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরেও উপদেষ্টা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ও সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে বক্তৃতা দেবেন। উপদেষ্টা এছাড়া বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সাংহাইয়ে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। গত রোববার চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও এ সফরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি চীনের শ্রদ্ধার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা : চীন বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন সুদের হারে ঋণের সুবিধা দিচ্ছে। এই সফরের মূল অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ঋণের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করা, যেমন সুদের হার বর্তমান ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা, প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফ করা ও গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও চীনে রফতানি বৃদ্ধির বিষয়েও আলাপ-আলোচনা হবে। গত সপ্তাহে যাত্রাপূর্ব ব্রিফিংয়ে বলেন তৌহিদ বলেছেন, আলোচনায় অর্থনৈতিকবিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, চীন কীভাবে বাজেট সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ঋণ বিতরণ ত্বরান্বিত করতে পারে তা আমরা খতিয়ে দেখব।

তৌহিদ বলেন, সফরকালে প্রতিশ্রুতি ফি সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হবে।

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন : ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উভয় দেশই এই মাইল ফলকটি স্মরণীয় করে রাখতে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান উদযাপনের পরিকল্পনা করেছে। ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের কর্মসূচি এ সফরকালে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ সফর পারস্পরিক সমঝোতা, বন্ধুত্ব এবং দুই দেশের মধ্যে একটি প্রাণবন্ত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করবে, কৌশলগত ও কারিগরি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রোহিঙ্গা ইস্যু : এখনও কোনো সমাধান অর্জিত না হলেও, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার রোহিঙ্গা সংকটে চীন দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রধান আলোচনায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তৌহিদ রোববার চীনা রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেছেন যে, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সহজতর করতে ঢাকা চীনের কাছ থেকে ‘অত্যন্ত জোরদার’ ও ‘সক্রিয়’ ভূমিকা প্রত্যাশা করে।

স্বাস্থ্য সহযোগিতা : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের নিকটবর্তী কুনমিংয়ে কমপক্ষে তিন থেকে চারটি সেরা পর্যায়ের হাসপাতাল মনোনীত করার জন্য চীনকে অনুরোধ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। হোসেন আরো জানান, ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক চীনা হাসপাতাল স্থাপনে বাংলাদেশ ভূমি ও লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা : চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ চীন থেকে বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, অপরদিকে রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৬৭০ মিলিয়ন ডলার। চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও কম, যার ফলে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। সফর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেইজিংয়ে উপদেষ্টার আলোচনার সময় এই বৈষম্য মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত