জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয়ে (জাবিতে) ছোট-বড় সব মিলিয়ে ২৬টি লেক। যেখানে চলতি বছরে পাখি বসেছে ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টারের (ডব্লিওআরসি) ও আলবেরুনী হল সংলগ্ন লেক নিয়ে মাত্র দুটিতে। যেখানে পাখির সংখ্যা আনুমানিক দুই হাজার। তাও মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই চলে যেতে শুরু করেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সবুজ গাছপালাসমৃদ্ধ লেক ও পুকুর থাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে সাধারণত শীতের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আনাগোনা শুরু হতো জাবিতে। শীতের শেষে ফিরে যেত পুরাতন আবাসে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এসব পাখি আসার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। আবার যেগুলোও আসছে, তাও টিকছে না বেশিদিন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষের অধিক যাতায়াত, শব্দ দূষণ, আলোক দূষণ, পর্যাপ্ত অভয়ারণ্য না থাকা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে অতিথি পাখিদের আগমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কয়েক বছর ধরেই উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে পাখির সংখ্যা। কারণ পাখি যখন ওড়ে, তখন সে সবুজ খোঁজে। ক্যাম্পাসে অনেকগুলো নতুন ভবন তৈরি হওয়ায় গাছ কাটা পড়েছে। এতে সবুজ অনেক কমে গেছে। এছাড়া ভবনগুলো বেশি উঁচু হওয়ায় পাখির ফ্লাইং জোন হুমকিতে পড়েছে। ফলে পাখিরা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছে না।
এছাড়া অসচেতনভাবে ব্যবহৃত মাস্ক, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য লেকে ফেলায় পরিযায়ী পাখি বিচরণের স্বাভাবিক পরিবেশ নেই, এমনকি পাখির খাবারও নষ্ট হয়েছে। বর্তমান সময়ে পাখি কম আসার সবচেয়ে বড় কারণ এটা’।
সরেজমিন দেখা যায়, লেকগুলোর পাশে পাখিদের বিরক্ত না করার বিষয়ে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। যদিও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের, আল-বেরুনী হল সংলগ্ন, পরিবহন চত্বরের পাশের লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে জয়পাড়া লেকে কোনো পাখি নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরে সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত বলে সেখানের লেকে কিছু পাখি দেখা গেছে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে প্রথম জাবি ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি আসে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০৬ প্রজাতির পাখি ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে দেখা গেছে।
যেখানে ১২৬টি দেশি প্রজাতির। বাকিগুলো বিদেশি প্রজাতির। বেশিরভাগই আবার হাঁসজাতীয় পাখি।
বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পাখি অনেক কমে গেছে।
প্রথম দিকে অনেক পাখি আসলেও এখন কমতে কমতে অল্প সংখ্যক পাখি আছে। যদিও সামনে সেটাও থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। অথচ বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক অতিথি পাখি আছে। এবার ক্যাম্পাসে দেরিতে এসে আগেই চলে যাচ্ছে অতিথিরা’।
তিনি বলেন, এ বছর লেকগুলো পাখিদের জন্য উপযুক্ত ছিলো না। কয়েকটি লেক কচুরিপনায় ঢাকা পড়ে আছে।
আবার যেগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে, তাতে খাবার যথেষ্ট নেই। এছাড়া লেকগুলোতে স্যুয়ারেজের লাইন থাকায় বর্জ্য পানির সঙ্গে মিশে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসকে অতিথি পাখির কলরবে পরিপূর্ণ করতে চাইলে, সঠিক সময়ে লেক ও পুকুর পরিষ্কার এবং মানুষের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে’।
গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, এ বছর পাখি কম আসার অন্যতম কারণ হলো- পাখিদের বসবাসের মতো যথোপযুক্ত জায়গা না থাকা, জনসমাগম বেশি এবং নিয়মিত লেক পরিষ্কার না করা। তবে পাখি আসার পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন নির্মাণের বিষয়কে উল্লেখ করা হলেও এটার প্রভাব ঠিক কতটুকু সেটা সুনির্দিষ্ট নয়। আমার মনে হয়, ‘ক্যাম্পাসকে পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকাটা জরুরি’।