প্রতিদিন পানিতে ডুবে যাচ্ছে ৪১ প্রাণ

সাঁতার শেখার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪১ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান। বছর শেষে এই প্রাণহানি ১৫ হাজারে গিয়ে পৌঁছায়। নীরবে নানা বয়সি মানুষ এভাবে মারা গেলেও তা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। তাই সাঁতার প্রশিক্ষণ, পানিতে ডোবার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার কৌশল শেখানোর ব্যবস্থা সহজলভ্য করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাঁতার শেখানোর কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মশালায় এমন পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল জীবন রক্ষার উদ্যোগে ইউনিসেফের অঙ্গীকার- শীর্ষক পানিতে ডুবা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মশালায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ এবং চাইল্ড প্রোটেকশন চিফ ড. এলিসা কল্পনাসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) আয়োজনে এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের (ময়েস) নেতৃত্বে এই অনুষ্ঠানে কারিগরি দিকনির্দেশনা প্রদান করে ইউনিসেফ। ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইন-চার্জ এবং চাইল্ড প্রোটেকশন চিফ ড. এলিসা কল্পনা পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে ইউনিসেফ শুরু থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সিআইপিআরবি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (মওক্যা) সহযোগিতায় পরিচালিত ‘সুইমসেফ’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা শেখাচ্ছি। পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীলতা ও সমতার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখছি। ড. এলিসা কল্পনা আরো বলেন, এই প্রোগ্রাম শুধু জীবন বাঁচায় না, বরং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সহায়তা করে। খেলাধুলার মাধ্যমে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে, যা সমাজের ক্ষতিকর প্রথাগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহায্য করে। ইউনিসেফের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট মনিরা হাসান প্রোগ্রামটির সাফল্যের দিক তুলে ধরে বলেন, ২০০৬ সালে শুরু হওয়া ‘সুইমসেফ’ প্রোগ্রাম এরইমধ্যে ৬ লাখেরও বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে সাঁতার শেখাতে পেরেছে। ১০ হাজার কমিউনিটি ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং লক্ষাধিক অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ককে সচেতন করা হয়েছে। এই উদ্যোগ ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০২২ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রোগ্রামটি আরো সম্প্রসারিত হয়েছে, যা এর কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। অন্যান্য অতিথিরাও ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ উদ্যোগের টেকসই সম্প্রসারণে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তব্য রাখেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী, শিশু মৃত্যুরোধে স্বাস্থ্যখাতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সবাই মিলে এবং সচতেনতার মাধ্যমে পানিতে ডুবে অকালে প্রাণহানির হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে। ইউনিসেফ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্পোর্টস ফর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর সানজিদা ইসলাম খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা শেখানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন। ক্রীড়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আজিম হোসেন শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে খেলাধুলার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন এবং শিশু একাডেমির (আইসিবিসি প্রজেক্ট) প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিশুদের জন্য সাঁতার প্রশিক্ষণের সুযোগ সহজলভ্য করতে হবে। যাতে করে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির যুগ্ম সচিব মো. গোলাম মোস্তফা ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ উদ্যোগের সম্প্রসারণে অংশীদারিত্বের গুরুত্বের উপর জোর দেন। কর্মশালাটি শেষ হয় সুইমসেফ প্রোগ্রামের আরও বিস্তৃতি এবং বহুমুখী অংশীদারিত্ব জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তারা সবাই অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতি দেন যে, এ উদ্যোগ দেশের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জীবন সুরক্ষার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ও তারা এ নিয়ে কাজ করে যাবেন। অতিথিরা মনে করেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডুবানো প্রতিরোধকে একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে স্থাপন করা হবে, যা বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।