ঢাকা ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে জটিলতা

গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে জটিলতা

গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জটিলতা ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এতে এক শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। ৭ম ধাপের মাইগ্রেশনের মধ্য দিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শেষ হয়েছে গত রোববার। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো কিছু আসন ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া প্রথম মেধা তালিকায় যারা ভর্তি হয়েছেন এবং রোববার যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭ মাস বা এক সেমিস্টার ব্যবধান হয়ে গেছে। এ নিয়ে গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। এ কারণে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে ৪ সেপ্টম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসি সে কমিটি গঠন করলেও সেখানে অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুচ্ছভুক্ত ভর্তির সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বছরের মতো সময় লেগে যাচ্ছে। একাধিক মাইগ্রেশনের মধ্য দিয়ে শেষ করতে হচ্ছে ভর্তি কার্যক্রম। যারা প্রথম ধাপে ভর্তি হন আর যারা শেষ ধাপে ভর্তি হন, তাদের পড়াশোনার বড় ধরনের ব্যবধান হওয়ায় সেমিস্টার নিয়মিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এতে অনেকেই বাধ্য হয়ে পরবর্তী সেশনের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বেশি। কারণ একজন শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস না করলে অনেক বিষয় ঠিকঠাক বুঝতে পারেন না। ফলে পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন না। এভাবেই চলছে গুচ্ছের ভর্তির কার্যক্রম ও পড়াশোনা। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষার্থী না পাওয়া, ভর্তির দীর্ঘসূত্রিতা, একাধিক মাইগ্রেশনের তালিকা দিয়েও আসন শূন্য থাকা, বারবার ফি আদায় ও নির্দিষ্ট সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারার কারণ দেখিয়ে এবার গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে সরে যাচ্ছে একের পর এক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, আমরা এবার গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আলাদা ভর্তির তারিখ ঘোষণা করেছে আর সামনে যেগুলো বের হয়ে যাবে- সেগুলো বাদে অবশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে। গুচ্ছ ভর্তিতে ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। এছাড়া একাধিক ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না তাই অনেক সময় আসন শূন্য থাকে। আমি যেহেতু নতুন এই প্রক্রিয়ায়; তাই আগে কি অনিয়ম হয়েছে জানি না। সামনে সবকিছু স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করার চেষ্টা করব। জানা যায়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং খরচ কমাতে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি মিলে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়। গত শিক্ষাবর্ষে সাধারণ ২৪টি পাবলিক, প্রকৌশল ৩টি ও কৃষির গুচ্ছের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হলেও, এটি নিয়ে সুবিধার চেয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম বা দুর্নীতি করে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত চলমান। এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকবে কি থাকবে না, সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। এর কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিন গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। প্রথম গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে। এবার এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ও। চলতি মাসের ৩১ জানুয়ারি থেকে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই পথ অনুসরণ করতে চায় বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। গত রোববার গুচ্ছভুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ৭ম ধাপের মাইগ্রেশনের ভর্তি শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভর্তি প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো কয়েকটি আসন শূন্য আছে। গত বছরের ৫ জুন প্রথম ধাপের গুচ্ছভুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে কেটে গেছে সাড়ে ছয় মাস। এর মধ্যে মাইগ্রেশন হয়ে কিছু শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি হয়েছেন। এরইমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তিন মাস ক্লাস শেষ করেছেন। মিড পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন শেষ করে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভাগগুলো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত