পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার তৈরি করে বাজিমাত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা বগুড়ার রাজিয়া সুলতানা সুমি ও তার বড় বোন শামিমা আকতার। কৃষি খাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ কেঁচো সার উৎপাদনে সাড়ে ৪ বছরে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তারা। এই সার উৎপাদন করে দুই বোনের মাসিক আয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈবসারের উপকারিতা বেশি হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে তাদের।
জানা যায়, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জের কিচক ইউনিয়নের গড়িয়ার পাড়ার সেকেন্দার আলীর মেয়ে রাজিয়া সুলতানা সুমি (৩০) ও শামিমা আকতার (৩৭)। রাজিয়া সুলতানা সুমি ২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। এছাড়া তার বড় বোন শামিমা আকতার ছোট বোনের সাথে হাল ধরেছেন নিজ সংসারের। সুমির ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে পরিবারের হাল ধরার। তিনি পড়াশোনা শেষ করার পর করোনা মহামারীর কারণে ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জে ফিরে আসেন। আসার পর থেকে বাড়িতেই শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির প্রজেক্ট। সাথে সহযোগিতা করেন তার বড় বোন শামীমা। তারা দুইবোন মিলে গ্রামে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে গড়ে তোলেন শামীমা অ্যাগ্রো ফার্ম ও চেতনায়ন সংঘ। সেখানে তাদের পাশাপাশি আরো ১৬ জন নারী কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
রাজিয়া সুলতানা সুমি জানান, নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের প্রচেষ্টায় ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করি। পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদেরও এই কাজে যুক্ত করতে পেরেছি। প্রথমে ২৫টি স্যানিটারী রিং বসিয়ে শেরপুর থেকে কেঁচো কিনে প্রজেক্ট শুরু করি। বড় বোন শামীমা আগে থেকেই গরু পালন করায় গোবরের জন্য চিন্তা করতে হয়নি। পরে ধীরে ধীরে সার তৈরী করে বিক্রি শুরু করি। এভাবে কেঁচো সার বিক্রি করে এখন প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় আয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কেঁচো নিয়ে কাজ করার জন্য সমাজে অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রথম দিকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। এই কাজ করার কারণের গ্রামের মানুষেরা অনেক সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আমরা মানসিক স্থিরতা নিয়েই কাজ শুরু করেছি। তবে মানুষ এখন কেঁচো সারের উপকারিতার বিষয়ে জেনেছে এটাই সার্থকতা। আমরা চেতনায়ন মহিলা সংঘ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে আমরা দুই বোন ছাড়াও ১৬জন নারী নিয়মিত কাজ করছেন। আমরা তাদেরকে প্রথমে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভার্মি কম্পোস্ট অর্থাৎ কেঁচো সারের বিশেষত্ব হলো এটি হিউমাস সমৃদ্ধ জৈব সার। এটি মাটির উর্বরতা ও গাছের বৃদ্ধিসহ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাটির লবণাক্ততা কমায়।
এছাড়া এই সার মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি রাসায়নিক বিষমুক্ত। এ জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়। এছাড়া কৃষকদের কাছে এটি পরিবেশবান্ধব সার নামেও পরিচিত। যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় কেঁচো সার ব্যবহারে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন প্রান্তিক কৃষকরা। আবার অনেকেই সামান্য পুঁজি নিয়ে বাড়িতেই বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদনে আরও উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে দেশের কৃষি খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেইসঙ্গে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারবেন কৃষকরা। দেশের কৃষি উৎপাদনের স্বার্থে এ সারের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।