বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আগামী ২৯ জানুয়ারি উড স্নেক লুনার নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতির মধ্যেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভারতের সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলো চীনের প্রতি এশিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ন্যায্য রূপান্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে এশিয়ান পিপলস’ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)।
এপিএমডিডি বলছে, এশিয়া এখনও বিদ্যুৎবঞ্চিত এবং জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলা করছে।
গতকাল শুক্রবার এপিএমডিডি’র ম্যানিলা কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে এশিয়ার আন্দোলনগুলোর নেতারা বলেছেন, চীনই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বন্ধ করার পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। কারণ চীন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি, বিশেষত সৌর এবং বায়ু প্রযুক্তি, উৎপাদনকারী এবং সরবরাহকারী দেশ।
এপিএমডিডি’র সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, এশিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ১০০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থায় ন্যায্য ও দ্রুত রূপান্তরে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনন্য। কারণ চীন বিশ্বে সৌর ও বায়ু প্রযুক্তির ৭০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে এবং এই প্রযুক্তির খরচ কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানির বৈদ্যুতিক মিশ্রণের অংশ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং ন্যায্য রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগ করতে বিশাল আর্থিক সম্পদ রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করায় এখনও অনেক কাজ বাকি। এই বাস্তবতা চীনের এশিয়া ও বিশ্বজুড়ে শক্তি রূপান্তরের নেতৃত্ব গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা নির্দেশ করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও বেশি সহায়তা প্রয়োজন, বিশেষত ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য উপযুক্ত, ন্যায্য এবং পর্যাপ্ত অর্থায়নকে দ্রুততর করা ও প্রসারিত করার ক্ষেত্রে চীনের সহায়তা দরকার। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের প্রধান শরীফ জামিল বলেন, যেসব দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং শক্তিশালী অর্থায়নের সক্ষমতা রাখে, বিশেষত চীন, তাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং কম খরচে অর্থায়নকে সচল করা।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা অনেক এবং এটি এমন একটি স্থান যেখানে চীন দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির অর্থায়ন ও সরঞ্জাম সরবরাহ বাড়াতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে আরো বেশি সম্পৃক্ততা থাকা উচিত, যাতে টেকসই শক্তি উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রূপান্তর সহজ হয়। ইন্দোনেশিয়ার অ্যাকশন ফর ইকোলজি অ্যান্ড পিপলস’ ইমানসিপেশন (এইইআর)-এর সমন্বয়ক পিউস গিনটিং বলেন, ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি দ্রুত বন্ধ করতে হবে, তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তিকে জ্বালানি ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ন্যায্য রূপান্তরের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন প্রয়োজন। চীনের বিনিয়োগের অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহারের মাধ্যমে নিকেল শিল্পে ৯,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে, যা চীনা ও ইন্দোনেশীয় শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিকর।
ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস-এর সমন্বয়ক ইয়ান রিভেরা চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপ-জাতীয় সরকারগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশের জ্বালানি রূপান্তরকে এগিয়ে নেয়া উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপাইনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা অনেক, কিন্তু বিনিয়োগ প্রয়োজন। ১৭৮ গিগাওয়াট অফশোর এবং ১২২ গিগাওয়াট সৌর পিভি সম্ভাবনা বিনিয়োগের অপেক্ষায় আছে। বিশ্ব যখন এরই মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং বিজ্ঞান ২০২৫ সালকে জীবাশ্ম জ্বালানির শিখর হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তখন পরিচ্ছন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দ্রুত রূপান্তর সহ-লাভ প্রদান করতে পারে।
ভারতের মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল-এর চেয়ারম্যান রবি রেবাপ্রগাদা বলেন, ভারত এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর শক্তি রূপান্তর সমর্থনে চীনের অবস্থান অনন্য। চীন শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য জ্বালানির সরঞ্জাম এবং উপকরণ সরবরাহ করেই সাহায্য করতে পারে না, বরং প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, জ্ঞান শেয়ারিং এবং অর্থায়নের মাধ্যমে দেশগুলোকে দক্ষতা এবং সম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ করতে পারে, যাতে তারা নিজস্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থাকে দ্রুত বিকাশ ও বজায় রাখতে পারে। পাকিস্তানের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ইকুইটেবল ডেভেলপমেন্ট (প্রাইড)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাদর আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শুধু জলবায়ু সংকটের সমাধানই নয়। অনাবিষ্কৃত সৌর ও বায়ু শক্তির সম্পদগুলোকে প্রকৃত, কার্যকর প্রকল্পে রূপান্তরিত করে আমরা আমাদের জ্বালানি ব্যবস্থাকে রূপান্তর করতে পারি, বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করতে পারি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা শেষ করতে পারি।