বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের বাঘ খাবারের অভাবে বনের ভারতীয় অংশে যায়, এমন অভিযোগ নাকচ করেছে বাংলাদেশ বন বিভাগ। সুন্দরবনের ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত অংশের আশপাশের লোকালয়ে বাঘের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সেখানকার আনন্দবাজার পত্রিকায় গতকাল শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে সূত্রের বরাত দিয়ে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘেরা পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বনের ভারতীয় অংশ চলে যায়। এ অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বন বিভাগ অভিযোগটি ‘মনগড়া’ বলে নাকচ করে দেয়। খুলনার সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এজেডএম হাছানুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে কী পরিমাণ বাঘ, হরিণ, শূকর ও বানর আছে, তা জরিপের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে প্রকাশ করা হয়েছে। সেই জরিপের তথ্য অনুযায়ী নিশ্চিত করে বলা যায়, বনে বাঘ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে এমন হরিণ, শূকর ও বানর যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এই বন কর্মকর্তা মনে করেন, বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারের অংশ হিসেবে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় করার জন্য অভিযোগটি তোলা হয়ে থাকতে পারে, এমনটা মনে করেন তিনি। নাম উল্লেখ না করে পশ্চিমবঙ্গের বন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সূত্রে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের সময় আলাপআলোচনার ভিত্তিতে বনের সমস্যা সমাধান করা হতো। এখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বিষয়টি আলোচনার জন্য তোলা। তবে বর্তমানে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে জায়গায় গেছে, তাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে এ ধরনের আলোচনা করা কঠিন।
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একই দাবি করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘খাদ্যাভাবে’ বাংলাদেশের বাঘ ভারতে গেছে। ওই সময়ও বাংলাদেশের বনবিভাগ এমন দাবিকে ভিত্তিহীন বলেছিল। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘পদত্যাগ করে’ শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম ও খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে বিচারের মুখোমুখি করতে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দেশটিকে কূটনৈতিক পত্র দেয়। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে অস্বস্তিকর অবস্থা ও সীমান্তের বিভিন্ন অংশে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর ৬২ ভাগ বাংলাদেশে অবস্থিত। বাংলাদেশ সরকার গত অক্টোবরে বাঘ জরিপ ২০২৪ এর ফলাফল প্রকাশ করে। ২০২৩ - ২৪ সালে পরিচালিত এ জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ পাওয়া যায় ২২৫টি। ২০১৮ সালে বনে বাঘ পাওয়া গিয়েছিল ১১৪টি।
অর্থাৎ গত ছয় বছরে বাঘ প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২ দশমিক ৬৪টি। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের মোট খাবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ হরিণ, ১০ শতাংশ বুনো শূকর, ৫ শতাংশ বানর ও ৫ শতাংশ অন্যান্য প্রাণী। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএনএর সহযোগিতায় ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত জরিপের তথ্য দিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনে নজরদারি ও অভয়ারণ্যের আয়তন বাড়ানোয় বাঘের খাদ্য হরিণ, বানর ও শূকরের সংখ্যা বেড়েছে। বনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ, ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪টি বানর, ৪৭ হাজার ৫১৫টি বুনো শূকর, ২৫ হাজার ১২৪টি গুইসাপ ও ১২ হাজার ২৪১টি শজারুসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী আছে। সূত্র : আজকের পত্রিকা